শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা সেই বরগুনার আ.লীগ নেতা রিমান্ডে

বরিশাল অফিস :: বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে চাঁদাবাজি মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হারুন অর রশিদ এ আদেশ দেন।

এর আগে সকালে তাকে বরগুনা জেলখানা থেকে কড়া পুলিশি পাহারায় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হারুন অর রশিদ দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এ ছাড়া অপর এক চাঁদাবাজির মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এর আগে বুধবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে জাহাঙ্গীর কবিরকে বরগুনার আমতলাপাড় এলাকার তার নিজ বাসভবন থেকে বরগুনা থানা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার করে ঢাকার পুলিশের একটি বিশেষ টিম। ওই দিন বিকালে তাকে বরগুনার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গত সোমবার (১২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা তিন মিনিট কথা বলেন। এই ফোনালাপে জাহাঙ্গীর কবিরকে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা শৃঙ্খলা মেনে দলীয় কার্যক্রম চালাবেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে যথাযথভাবে পালন করবেন।’

এই নেতা শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আপা আপনি ঘাবড়াবেন না (মনোবল হারাবেন না)। আপনি ঘাবড়ালে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। আমরা শক্ত আছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ঘাবড়াবো কেন। আমি ভয় পাইনি। আপনারা দেখছেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে মেরে কীভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের মেরেছে। বোরকা পরে মেরেছে। এ দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যেভাবে আছেন থাকেন।’

মামলার বাদী বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, ‘বরগুনা সদর রোডে হারুন মোটরস নামে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। জাহাঙ্গীর কবির ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি আমার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে আমাকে ব্যবসা করতে দেবেন না হুমকি দেন। চাঁদা না দেওয়ার আমার দোকানটি দখল করে নেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এতদিন আমি মামলা করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৫০ বছর দলীয় প্রভাব আর ক্ষমতা দেখিয়ে জাহাঙ্গীর কবির বরগুনার ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চেম্বার অব কমার্স অবৈধভাবে দখল করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শহরের ঐতিহ্যবাহী বন্দরক্লাব দখল করেছেন। এ ছাড়া অনেকের ঘর জমি দখলসহ তার বিরুদ্ধে জুলুম, দখলের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আমার করা মামলায় আদালত তাকে দুই দিনের রিমান্ড দিয়েছেন।’

অপরদিকে ১৫ আগস্ট বিকালে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরসহ ছয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে বরগুনা থানায় মামলা করেছে বরগুনা পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম মামুন। এই মামলায় প্রধান আসামি ও করা হয় জাহাঙ্গীর কবিরকে।

মামলার অন্য আসামি হলেন- মিজানুর রহমান ওরফে দালাল মিজু, সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা কিসলু, বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ অলি, গোলাম কিবরিয়া পিন্টু ও পৌর কাউন্সিলর রইসুল আলম রিপন।

জাহাঙ্গীর কবিরের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে যে দুটি চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। তিনি বরগুনা শহরে একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ। তিনি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ১৩ বছর পর হারুন অর রশিদ হাওলাদার ও ৯ বছর পর মামুন নামের অপর এক ব্যক্তি দুটি সাজানো মামলা করেছেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর কবির ৭২ বছরের একজন বৃদ্ধ হার্ট ও কিডনি রোগে আক্রান্ত। আমরা আদালতে আবেদন করেছিলাম তাকে জেলখানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।’