এখন পর্যন্ত ৬টি ব্যর্থ কৌশল ইসরাইল বেছে নিয়েছে

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: গাজা যুদ্ধের শুরুতে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী পশ্চিমা মিডিয়া সাম্রাজ্যের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে এবং কিছু সময়ের জন্য নিপীড়ক হওয়ার ভান করে তার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল এবং নিজেকে বিজয়ী এবং নৃশংস যুদ্ধের দৃশ্যের অধিকারী হিসাবে উপস্থাপন করেছিল।কিন্তু তারপর তার ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ ও বর্বরতার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের সমর্থনকারী চরমপন্থি মিডিয়াও তাদের সমর্থন কমিয়ে দিয়েছে।

৭ অক্টোবরের অভিযানের বার্ষিকী পেরিয়ে গেছে কয়েকদিন। কেউ কেউ গত বছরের যুদ্ধের জয় বা পরাজয়ের দিকটি মূল্যায়ন করার চেষ্টাা করছেন। দৃশ্যত কিছু কৌশলী পদক্ষেপ যেমন অবকাঠামো ধ্বংস করা,পেজার বিস্ফোরিত করা, কিছু কমান্ডার এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের শহীদ করা এবং কিছু জায়গায় আক্রমণ করা কিছু লোকের জন্য এই মানসিকতা তৈরি করেছে যে ইসরাইলি সরকার এই যুদ্ধে অনেক কিছু অর্জন করে ফেলেছে। পার্সটুডের মতে জম জম পত্রিকার একটি সম্পাদকীয়তে আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশ্লেষক “আসগর জাবরজাদি” ​​এই ক্ষেত্রে ইসরাইলের কৌশলগত ৬টি ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন।

প্রথম কৌশল হল জয়ের ভান করা। কিছু চিন্তাবিদ আজকের বিশ্বকে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রভাবিত জগত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুদ্ধের শুরুতে ইহুদিবাদী শাসক পশ্চিমা মিডিয়া সাম্রাজ্যের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে এবং কিছু সময়ের জন্য নিপীড়ক হওয়ার ভান করে তার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল এবং নিজেকে বিজয়ী এবং নৃশংস যুদ্ধের দৃশ্যের অধিকারী হিসাবে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু তারপরে তার ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ ও নৃশংসতার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের সমর্থনকারী চরমপন্থি মিডিয়াও তাদের সমর্থন কমিয়ে দিয়েছে এবং কার্যত ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা আগের চেয়ে সরব হয়েছে এবং আজ বিশ্ব জনমতের কাছে শাসনটি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

দ্বিতীয় কৌশল হল প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের নেতাদের নির্মূল করা। বিক্ষোভকারী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে নেতাদের অপসারণ করা হলে আন্দোলন দুর্বল হতে পারে এবং এটি একসময় ধ্বংস হতে পারে তবে প্রতিরোধ আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটি একটি চরম ভুল ধারনা। প্রতিরোধের একটি উচ্চ আধ্যাত্মিক মূল্য রয়েছে যার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনুপ্রেরণা রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি পরিকল্পিতভাবে সুসংগঠিত হয়েছে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে বিগত বছর হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে এবং এর বিভিন্ন স্তরের নেতা ও কমান্ডারদের নির্মূল করার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা এবং এই ব্যর্থ কৌশলের ফলে নতুন নেতাদের পুনরুত্থান হয়েছে।

তৃতীয় কৌশলটি হল দখলকৃত অঞ্চলের আশপাশের ভূমিতে একটি বাফার জোন তৈরি করা। প্রতিরোধকামী বাহিনীগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে তাদেরকে দমন করার নীতি ইসরাইলের ব্যর্থ হয়েছে।

চতুর্থ কৌশলটি হ’ল যুদ্ধের ব্যয় অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য অঞ্চল এবং বিশ্বে সংকট জিইয়ে রাখা। এই সিদ্ধান্ত একটি কৌশল কিন্তু স্ট্রেটিজি নয়। হয়ত শুরুতে দেশগুলো সংকট রোধ করতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু নিঃসন্দেহে এটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং তারা মৌলিকভাবে এটি সমাধানের জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। এখন পর্যন্ত কৃত্রিম শান্তির পদ্ধতিগুলো অঞ্চল দ্বারা গৃহীত হয়নি এবং মনে হচ্ছে এই কৌশলের প্রভাব ভবিষ্যতে এই শাসনের অবসানই হবে দেশগুলোর একমাত্র ঐক্যমত্য সমাধান।

ইসরাইলের পঞ্চম কৌশল হল মানুষকে প্রতিরোধের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো এবং বিভিন্ন বৈষম্যমূলকনীতি তৈরি করা। ইসরাইল প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার অভাব প্রবর্তন করতে চাইছে এবং প্রতিরোধ অক্ষ ধ্বংস করতে চাইছে কিন্তু তার শিকড় জনগণের গভীরে প্রথিত। ইসরাইল এটা অস্বীকার করার চেষ্টা করছে যে অতীত সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা অনেক আলাদা এবং তারা ঠিক জানে যে এই অঞ্চলের সংকটের মূল ক্যান্সারের টিউমার কুখ্যাত ইহুদিবাদী শাসন। এই কৌশলটি বেছে নেওয়ার ফলে ইসরাইলি শাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ব অঞ্চলে জনপ্রিয় আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং এই আন্দোলনগুলো গতি এত বেশি যে আরব শাসকরা তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর নাগরিক বিক্ষোভ সৃষ্টির কারণে উদ্বিগ্ন।

ষষ্ঠ কৌশল হলো যুদ্ধ সম্প্রসারণ করা। এই ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠীর অবশ্যই জানা উচিত যে এর কৌশলগত গভীরতার উপাদানের অভাব রয়েছে। তবে প্রতিরোধের ফ্রন্ট প্রশস্ত এবং ইরান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত কৌশলগত গভীরতা রয়েছে। অতএব, বিমান বাহিনীর উপর নির্ভর করে নেতানিয়াহু কৌশলগত অপারেশন পরিচালনা করছেন। তাই তাকে খুব ভাল করেই জানতে হবে যে মূল যুদ্ধটি স্থলভাগে এবং তিনি এখনও স্থলে কাজ করেননি এবং তিনি সব সময় স্থল যুদ্ধের ভয় পান। প্রতিরোধের বিভিন্ন ফ্রন্টের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব তথ্য, অস্ত্র ও রাজনীতির দিক থেকে ইসরাইলি শাসনকে নিঃশেষ করে দিয়েছে।