ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘গোয়েন্দা তথ্য এবং অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে’ আল-শিফা হাসপাতালের বেশ কিছু অংশে তারা ‘হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট এবং টার্গেটেড অভিযান’ চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের দাবি, ‘হামাস যাদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে সেইসব বেসামরিক নাগরিকদের কোনও ক্ষতি হবে না’। আইডিএফ বলেছে, তারা সম্প্রতি গাজার কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালের মধ্যে সমস্ত সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে বলেছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।
গাজার বৃহত্তম এই চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগী ও চিকিৎসা কর্মীসহ হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক হাসপাতালে এবং এর আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য হামাস তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাসপাতাল ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং এ বিষয়ে কোনও আন্তর্জাতিক কমিটিকে এসে পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জোর দিয়ে দাবি করছে, হাসপাতালের নিচে অবস্থিত একটি টানেলে হামাস কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল সেন্টার পরিচালনা করছে। তবে হামাস এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটি অস্বীকার করেছে।
পরে যুক্তরাষ্ট্রও দাবি করে, হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
এদিকে আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইসরায়েলি ট্যাংক ও বুলডোজার প্রবেশ করেছে। আল-শিফার ডাক্তার মোখাল্লালাতি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
মোখাল্লালাতি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের কেন্দ্রে ট্যাংক এবং বুলডোজার দেখেছি।’
তিনি বলেন, তিনি হাসপাতালের জরুরি কক্ষের ওপরে মূল ভবনটি পরিদর্শন করেছেন এবং ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে প্রবেশ করেছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু তিনি বলেছেন, তিনি অন্যান্য ভবনগুলোর অবস্থা জানেন না যেগুলোতে রোগী এবং বাস্তুচ্যুত লোকরা অবস্থান করছেন।
মোখাল্লালাতি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এখনও ভারী গোলাগুলি হচ্ছে এবং আমরা সর্বত্র বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।’
এর আগে আল-শিফা হাসপাতালের চারদিক থেকে ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এই হাসপাতালের ভেতরে শত শত রোগী রয়েছেন; যাদের মধ্যে অনেক শিশুও আছে। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালটির জেনারেটর। যে কারণে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রোগীরা এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে (ডব্লিউএইচও) মঙ্গলবার জানায়, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতাল ‘প্রায় কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের স্থাপনার ভেতরে এবং বাইরে মরদেহ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের দাফনের ব্যবস্থাও করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আল-শিফা হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা কয়েক ডজন শিশুর জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে তারা ইনকিউবেটরে আর থাকতে পারছে না।
সেখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, অক্সিজেনের অভাবে ইনকিউবেটরে থাকা সাতটি শিশু মারা গেছে। অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপদেষ্টা মার্ক বলেছেন, ইসরায়েল ওই শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও হামাস সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।