শিরোনাম

আনন্দ-উল্লাস আর হতাশ ও বেদনার দিন আজ

Views: 73

নৌকার মাঝিদের তালিকা প্রকাশ ঘিরে

বরিশাল অফিস:  সকল হিসেব নিকেশ শেষ। আগেই চূড়ান্ত তালিকা হয়ে গেছে। তারপরেও আজ রোববার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কারা পেলেন, তার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। বরিশাল জেলার ৬টি আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন এনিয়ে গত শুক্র ও শনিবার নানান গুঞ্জন চললেও আজ বিকেলে সকল গুঞ্জনের যবনিকাপাত ঘটতে যাচ্ছে। সাবেকরাই বহাল না নতুন মুখ আসছে সব প্রশ্নেরই জবাব মিলবে আজ। সঙ্গত কারনেই তাই সকলের দৃষ্টি আজ থাকবে কেন্দ্রের ঘোষনার দিকে।

আজ বিকেলে প্রার্থী তালিকা ঘোষনার পর কারো মুখে থাকবে আনন্দভরা প্রাপ্তির হাসি। আবার কেউ কেউ বিষাদভরা মন নিয়ে আগামীতে প্রাপ্তি হবে এনিয়ে নিজেদের মধ্যে সান্তনা খোঁজার চেষ্টা করবেন। বরিশাল জেলার ৬টি আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন তারাসহ তাদের অনুসারী ও কর্মী সমর্থকরা গত কয়েকদিন ধরে অনেকটা নির্ঘূম রাত কাটিয়েছেন এটা বলা চলে। আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ আসন।

এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগে লড়াই নেই। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর পদমর্যাদায়), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।গোটা দক্ষিণাঞ্চলে দলের নেতা-কর্মীরা অভিভাবক হিসেবে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে শ্রদ্ধা করেন। তাই বরিশাল-১ আসনে আসন্ন নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছে তার অবস্থান। জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন তিনি। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ছাড়া অন্য কোন নেতা এ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি। ফলে তার কর্মী সমর্থকরা অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল-১ আসনে সবথেকে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। ১০টি সংসদ নির্বাচনে ছয়বার জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ, আর বিএনপি করেছে তিনবার এবং জাতীয় পার্টি দু’বার।বরিশালের সন্ধ্যা নদীর তীরে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলা মিলে গঠিত বরিশাল-২ আসন। উজিরপুরের হারতার শাপলা বিলের জন্য বর্তমানে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিত এই দুই উপজেলা। তাই এখানে যেমন খ্যাতি রয়েছে, তেমনি জেলার অন্যসব সংসদীয় আসনের মধ্যে সর্বাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর তৎপরতায় আলোচনার শীর্ষে রয়েছে বরিশাল-২ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক।

আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন- দশম সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, মুহাম্মদ আনিসুর রহমান, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা, শের-ই বাংলা একে ফজলুল হকের নাতি একে ফাইয়াজুল হক, এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা আবিদ আল হাসান, আবুল হাকিম সন্যামত, আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান খান, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মীরা, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম, একাদশ সংসদের সদস্য মো. শাহে আলম, পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র হালদার ও আব্দুল হক।

তবে শেষ পর্যন্ত শাহে আলম না হয় অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।বাবুগঞ্জ ও মুলাদী-এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে বরিশাল-৩ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগ সবসময় জোট থেকে প্রার্থী দিয়ে থাকে। বর্তমানেও এ আসনের সংসদ সদস্য জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত। কিন্তু টানা তৃতীয় মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী হলেও স্বাধীনতার পর থেকে এখানে তারা কখনো এমপি প্রার্থী পায়নি।তাই এবার আর মহাজোটের শরিক দলকে নয়, ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ ও তার সব সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

আসনটিতে দলীয় প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ড. মোহাম্মদ আমিনুল হক কবির, মো. শাফায়েত হোসেন, মিজানুর রহমান ও আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুল আলম, আসাদুল হক, বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত সচিব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদ, চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার খালেদ হোসেন স্বপন, মো. জহিরউদ্দিন ও মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম খান মিঠু। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এবারও এ আসনটিতে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। বরিশাল থেকে নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুই উপজেলা হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ নিয়ে গঠিত হয়েছে বরিশাল-৪ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়। এখানকার আওয়ামী রাজনীতির এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ।আরেক পক্ষে রয়েছেন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খানসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা।

অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে ইতোমধ্যে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।তবে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। পঙ্কজ ছাড়াও এখন পর্যন্ত আসনটির মনোনয়ন চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন হেমায়েতউদ্দিন খান, আফজালুল করিম, শাম্মী আহমেদ, মেজর অব. নাসিরউদ্দিন খান, মো. শাহে আলম, তারিক বিন ইসলাম, মেজর অবসরপ্রাপ্ত মহসিন শিকদার। বর্তমান সাংসদ পংকজ নাথকে বাদ দিয়ে এবার নতুন কাউকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে এধরনের গুঞ্জন চলছে বেশ কয়েকদিন ধরে।বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও বরিশাল সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৫ আসন। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনকে নিয়ে যত জল্পনা- কল্পনা।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।বরিশাল-৫ আসন বিএনপির হাত থেকে উদ্ধার করেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণ। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। এরপর তার অকাল মৃত্যুতে আসনটিতে তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন।

এদিকে দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন,পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম (এসপি মাহবুব), মো. মশিউর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মোর্শেদা বেগম, সালাউদ্দিন রিপন, আরেফিন মোল্লা।তবে জাহাঙ্গীর কবির নানক এ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনলেও জমা দেননি বলে জানা যায়। তিনি ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এ আসনে সাবেক বহাল না নতুন কেউ তা জানতে আজ বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ঘেরা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা।জেলার সবচেয়ে বড় এ উপজেলা নিয়েই বরিশাল-৬ আসন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার বলে দেয় এখানে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা মজবুত।তারপরও জাতীয় নির্বাচনে জোটের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সবসময় আসনটি ছেড়ে দিচ্ছে জাতীয় পার্টির কাছে।

আর সে হিসেবে এ আসনে জাতীয় পার্টিই রয়েছে এগিয়ে।বর্তমানে বরিশাল-৬ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা আমিন। তবে এর আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।আর এবারে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান এমপি নাসরিন জাহান রতনা আমিন।

অপরদিকে আসনে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগেরই বেশ কয়েকজন। আর স্থানীয় নেতাকর্মীরাও আসনটি আর জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে চান না।এরই মধ্যে বরিশাল-৬ আসন থেকে বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, রাজিব আহম্মেদ তালুকদার, আব্দুল হাফিজ মল্লিক, বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল আলম, শাহনাজ পারভীন রানী, প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ,

বাকেরগঞ্জ পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এ আসনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও শেষ পর্যন্ত কোন ছাড় দেয় কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *