শিরোনাম

বিশ্লেষণ: তফসিল পেছালেই কি সমঝোতা সম্ভব?

Views: 108

চন্দ্রদীপ নিউজ ডেস্ক ::  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর)। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগ মুহূর্তেও বিএনপি নির্বাচনে আসে কিনা তা নিয়ে দিনভর সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি কৌতূহল ছিল। সেই কৌতূহল থেকেই বিএনপি আজ মনোনয়নপত্র জমা দেয় কিনা তা দেখতে অনেকেই উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি আজ কোনো মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি একটি জানার উৎসাহ থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আগেই বুঝতে পারছিলেন যে, বিএনপি নির্বাচনে আসছে না। কারণ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও তারা হরতাল পালন করেছে। তাছাড়া বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কোনো ধরনের প্রস্তুতিও নেই।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতারা এখন কারাগারে। এই অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হওয়াটাও অসম্ভব। কারণ সংলাপের জন্য কথা বলার মতো নেতা কেউ কারাগারের বাইরে নেই।

কথা হচ্ছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা অতিক্রম করার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনে আসার কিংবা সমঝোতার আর কি কোনো সুযোগ রয়েছে কিনা। আজ দিন শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়নি। তার মানে বিএনপিকে ছাড়াই কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অথচ একাধিক নির্বাচন কমিশনার বারবারই বলছিলেন বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পিছিয়ে দেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তফসিল পেছানো এখনো সম্ভব। আর নির্বাচন কমিশনের হাতে সেই ক্ষমতাও রয়েছে। যদিও ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ৪৫ দিন সময় থাকার প্রয়োজন। সেই হিসেবে এবার নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এক সপ্তাহ সময় হাতে রয়েছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল পেছানো যেতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে না-ই আসে তাহলে তফসিল পিছিয়ে কি লাভ তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কারাগারে আর যারা বাইরে রয়েছেন তারাও প্রকাশ্যে আসছেন না। এ অবস্থায় আলোচনা বা সংলাপে বসার মতো পরিস্থিতি নেই। রাজনৈতিক যে পরিবেশ এখন বিরাজ করছে কিংবা বিদেশি কোনো দেশের পক্ষ থেকেও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা পার হয়ে গেলেও তফসিল পেছানো যেতে পারে। তফসিল শুধু পেছানোই নয়, চাইলে নির্বাচন কমিশন তা বাতিলও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কমিশনকে অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতীতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনো কমিশনকে নিতে দেখা যায়নি।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও আর কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই। যদিও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সময়সীমা ঠিক রেখে যদি তফসিল সমন্বয় করে সেটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে একটি সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের পর সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

এদিকে সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ আগে থেকেই পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে সরকারের কাছে রওশন এরশাদের এই দাবি আদৌ প্রাধান্য পাবে না বলেই অনুমিত।

যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং ইউরোপের সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা বুধবার নির্বাচন কমিশনে গিয়েছেন এবং বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূতরা গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন।

বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন, তারা যেহেতু সরকারের পদত্যাগের আন্দোলন করছেন, তাই তফসিল পেছানো হোক না হোক এ বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, তারা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন চান। এখানে মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়ালেই তাদের দাবি অর্জিত হবে না।

সবকিছু বিবেচনা করে এবং বিএনপি-আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানে এটা স্পষ্ট যে, তফসিল পেছালেই দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হবে না। এজন্য চাই আন্তরিক উদ্যোগ এবং শর্তহীন সংলাপ।

চন্দ্রদীপ নিউজ/ এস এল টি

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *