দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। সব নবি-রাসূল ও মহামানবের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় দেশপ্রেম ছিল। ইসলামের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখতে পাই, পূর্বসূরি মনীষীরা স্বদেশ ও স্বজাতিকে নিজের সন্তান ও পরিজনের মতো ভালোবাসতেন। স্বদেশ ও স্বজাতির অধিকার আদায়ে যুগে যুগে ইসলামি চিন্তাবিদরা, ধর্মভীরু ব্যক্তিবর্গ তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাদের মধ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে শহাদতবরণ, ওমর বিন আবদুল আজিজ (রা.), মুহম্মদ বিন কাসিম, সাইয়্যেদ আহমদ শহিদ, ইসমাঈল শহিদ, মীর নিসার আলি তিতুমির, টিপু সুলতানসহ অসংখ্য মুসলিম নেতা দেশের স্বাধীনতা, মানুষের ধর্মীয় ও জাগতিক অধিকারের জন্য জীবন দান করে গোটা উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আরবি ভাষায় একটি বাণী স্বতঃসিদ্ধ আছে ‘হুব্বুল ওয়াতান মিনাল ইমান’। ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’। দেশের প্রতি ভালোবাসা মহব্বত ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। জন্মভূমি মক্কা মোকাররমার প্রতি মহানবি (সা.)-এর অপরিসীম ভালোবাসার কথা কে না জানে। মহানবির শিক্ষাই হচ্ছে দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি প্রাণী জগতের প্রতি ভালোবাসা। মহানবি (সা.)কে প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকেরা হিংস্রতার চরম নিষ্ঠুরতায় মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করল। তিনি যখন পবিত্র মদিনার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তখন পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলেছিলেন, ‘ভূখণ্ড হিসাবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র বসবাস করতাম না’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৯২৬)। এছাড়া আরও অনেক হাদিসে দেশপ্রেমের কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ আমাদের অহংকার। এ দেশ আমাদের গৌরবের মিনার। সুতরাং দেশের প্রতি, প্রতিটি নাগরিকের ভালোবাসা থাকা আবশ্যকীয়। এ ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ আমাদের দেশপ্রেমের প্রতি উৎসাহ দেয়। ইসলামে রয়েছে দেশপ্রেমের অত্যধিক গুরুত্ব। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের আদেশ মেনে চল’ (সূরা নিসা : ৫৯)। আরও ইরশাদ হয়েছে-‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করে (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)। হাদিসে এসেছে; হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রাসূলের সঙ্গে খায়বার অভিযানে গেলাম। অতঃপর যখন অভিযান শেষে নবি করিম (সা.) ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৮৯)। এছাড়া হুজুর (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘হে লোক সকল! জেনে রেখ! তোমাদের প্রতিপালক একজন। জেনে রেখ, অনারবের ওপর আরবের, আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সাদার ওপর কালোর, কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তবে তাকওয়ার ভিত্তিতে একজন আরেকজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারবে’ (মুসনাদ আহমদ, ৫/৪১১; বায়হাকির সূত্রে দুররে মানসুর ৬/১২২)। মহানবি (সা.) আরও বলেন, দেশ রক্ষার জন্য সীমান্ত পাহারায় আল্লাহর রাস্তায় বিনিদ্র রজনি যাপন করা দুনিয়া ও এর মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে উত্তম (বোখারি)। অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় এক রাতের রিবাদ একমাস ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা এবং এক মাসের রাতগুলো ইবাদত করার চেয়ে উত্তম (মুসলিম শরিফ)। মহানবি আরও বলেন, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে কখনোই স্পর্শ করবে না, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় সীমানা পাহারায় বিনিদ্র রাত কাটায় (তিরমিজি)।
ড. মো. শহিদুল্লাহ বলেছেন, আমাদের মা তিনটি, একটি যিনি গর্ভধারণ করেন দ্বিতীয় আমরা যে ভাষায় কথা বলি সেটি আরেকটি হচ্ছে আমাদের মাতৃভূমি মা। দেশের সব নাগরিক রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেশকে সুন্দর রাখা বিজয় দিবসের এটিই হোক আমাদের অঙ্গীকার। মহান আল্লাহ সব দেশপ্রেমিক শহিদদের জান্নাতবাসী করুন এবং সুখ ও সমৃদ্ধিতে এ দেশ এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা। সব সময় আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব।
মোহাম্মাদ মোস্তাকিম হোসাইন