শিরোনাম

আজ থেকে শুরু আলোচিত সৌদি পেশাদার লিগ

Views: 33

এক বছর হাই-প্রোফাইল ট্রান্সফার এবং “স্পোর্টসওয়াশিং” এর ক্রমবর্ধমান অভিযোগের পরে সৌদি ফুটবলের প্রতি অভূতপূর্ব মনোযোগের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সৌদি পেশাদার লিগ।

ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মধ্য প্রাচ্যের অন্যতম তেল সমৃদ্ধ ধনী দেশটির আকর্ষনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে একে একে সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন করিম বেনজেমা, জর্ডান হেন্ডারসন ও সাদিও মানের মত তারকারা। আর এ কারনেই হঠাৎ করেই ইউরোপীয়ান শীর্ষ লিগগুলোর বাইরে গিয়ে ফুটবল বিশ্বকে সৌদি লিগের মত অচেনা একটি আসরের প্রতি মনোযোগী হতে হচ্ছে।

ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে নিতে গত মাসে আল-হিলাল পিএসজিকে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও তাতে কোন সাড়া মিলেনি।
এই লিগে ১৮টি দল অংশ নিচ্ছে। প্রতিটি দলে আটজন করে বিদেশী খেলোয়াড় রেজিষ্ট্রেশনের অনুমতি রয়েছে।
প্যারিসের স্কেমা বিজসেন স্কুলের স্পোর্টস ও জিওপলিটিক্যাল ইকনোমি বিভাগে অধ্যক্ষ সাইমন চাডউইক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘সৌদি আরব ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মত হতে চায়। তাদের প্রতি গণমাধ্যমগুলোও মনোযোগী হচ্ছে। আমার জানামতে অনেকেই এখন এমন প্রশ্নও করছে, কোথায় তারা এই সৌদি লিগের ম্যাচগুলো দেখতে পারবে।’

মাত্র পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবে অমুসলিম পর্যটকদের ভ্রমন ও নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। আর এসবই মধ্য প্রাচ্যের অন্যতম রক্ষণশীল দেশটিকে বিশ্বের সামনে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হতে সহযোগিতা করে। বিশ্বের অন্যতম তেল সমৃদ্ধ এই দেশটি ক্রীড়াঙ্গনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বছরের শুরুতে রোনাল্ডোর মত সুপারস্টারকে দলে ভেড়ানোর মত সাহস দেখায় সৌদি লিগের শীর্ষ ক্লাব আল নাসর। তার পাশাপাশি জেদ্দায় ফমূর্লা ওয়ান ও আকর্ষণীয় এলআইভি গলফ ট্যুরের আয়োজন করা হয়। এসব দিয়ে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান মানবাধিকার রেকর্ডকে ‘স্পোর্টসওয়াশিং’ এর মাধ্যমে এড়িয়ে যাচ্ছে।

সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিচক্ষনতায় দেশটির অর্থনীতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বিশ্ব যেখানে অন্য জ্বালানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে সেখানে সৌদি যুবরাজ বুঝতে পারেন তাদের শুধুমাত্র তেলের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিব আল রিয়াদের প্রধান সম্পাদক মকবেল আল-জাবনি বলেছেন যুবরাজ চাইছেন পেশাদার ফুটবলকে মধ্য প্রাচ্য ও আরব বিশ্বের একসাথে ছড়িয়ে দিতে।

জানুয়ারিতে রিয়াদের ক্লাব আল নাসরেতে রোনাল্ডো আসার পর থেকে সৌদি লিগের অন্য শীর্ষ ক্লাবগুলো নড়েচড়ে বসে। সবগুলো ক্লাবই আকর্ষনীয় মূল্যে ইউরোপীয়ান শীর্ষ খেলোয়াড় ও কোচদের একের পর এক প্রস্তাব দিতে থাকে। লিগের বোর্ডের সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত থাকা ব্রিটিশ পরিচালক পিটার হুটন বলেছেন, ‘আমি ক্রীড়াঙ্গানে গত ৪০ বছর ধরে কাজ করছি। এত বড় প্রকল্প আমি কখনো দেখিনি। সাফল্যের ব্যপারে তারা দারুন আশাবাদী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ম্যানচেস্টার সিটি বস পেপ গার্দিওলা বলেছেন সৌদি লিগ সম্পূর্ণভাবে মার্কেটকে বদলে দিয়েছে। ইউরোপীয়ান লিগ থেকে আরো অনেক খেলোয়াড়ই সেখানে পাড়ি জমাবে বলে গার্দিওলা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
যদিও বিশ্বের বেশ কিছু গণমাধ্যমের দাবী বিশ্ব ফুটবলে প্রভাব বিস্তার করতে হলে সৌদি লিগকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে। গত মাসে ফিফা আল নাসরকে নতুন খেলোয়াড় রেজিষ্ট্রেশনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০১৮ সালে নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার আহমেদ মুসাকে নেবার জন্য তারা লিস্টার সিটিকে ৩ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড দেয়নি, এই অভিযোগে আল নাসরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদিও পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা আবার উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
চাডউইক বলেছেন, ‘সৌদি পেশাদার লিগ বেশ চিন্তাভাবনা করেই পরিকল্পনা করেছে। হয়তোবা আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে এর সুফল তারা পাবে। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতোমধ্যেই এখানকার ক্লাবগুলো সফলতা অর্জণ করা শুরু করেছে।’

রোনাল্ডোর পর ২০২২ ব্যালন ডি’অর বিজয়ী করিম বেনজেমা তিন বছরের চুক্তিতে গত জুনে আল-ইত্তিহাদে যোগ দিয়েছেন।

শীর্ষ এসব তারকাদের সাথে আরো বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় সৌদি আরবে খেলতে এসেছেন। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে খেলা ইন্টার মিলানের অধিনায়ক মার্সেলো ব্রোজোভিচ তিন বছরের চুক্তিতে ১৮ মিলিয়ন ইউরোতে আল নাসরে যোগ দিয়েছেন। লিভারপুলের সাবেক অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন ২০২৬ সাল পর্যন্ত আল-ইত্তিফাকে নাম লিখিয়েছেন। আরেক লিভারপুল তারকা ব্রাজিলিয়ান রবার্তো ফিরমিনো ও সেনেগালের এডুয়ার্ড মেন্ডিকে দলে নিয়েছে আল-আহলি। স্ট্যামফোর্ড ব্রীজ ছেড়ে আল-হিলালে ২৩ মিলিয়ান ইউরোতে খেলতে এসেছেন কালিদু কুলিবালি। ২৮ বছর বয়সী আইভরি কোস্টের মিডফিল্ডার সেকো ফোফানাও ফরাসি ক্লাব লেন্স ছেড়ে আল নাসরে যোগ দিয়েছেন। ল্যাজিওতে আট বছর কাটানোর পর সার্বিয়ার মিডফিল্ডার সার্গেই মিলিনকোভিচ-সাভিচ তিন বছরের চুক্তিতে আল-হিলালে যোগ দিয়েছেন। তার সাথে এই দলে আরো যোগ দেবার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন পর্তুগীজ তারকা রুবেন নেভেস। আরেক ফ্রেঞ্চম্যান এ্যালান সেইন্ট-ম্যাক্সিমিন নিউক্যাসল থেকে আল-আহলিতে এসেছেন।
সৌদি পেশাদার লিগে বেশ কয়েকজন কোচও যোগ দিয়েছেন। লিভারপুলের সাবেক আইকনিক অধিনায়ক স্টিভেন জেরার্ড ২০২৫ সাল পর্যন্ত আল-ইত্তিফাকে নাম লিখিয়েছেন। ক্রোয়েশিয়া ও ওয়েস্ট হ্যামের সাবেক বস স্লাভেন বিলিচ এসেছেন আল-ফাতেহ ক্লাবে। জুনে ফেনারবাচ ছাড়ার পর বেনফিকার সাবেক কোচ জর্জ জেসুস আল-হিলালে ফিরে এসেছেন। এর আগে তিনি ২০১৮-১৯ সালে এই ক্লাবের সাথে কাজ করেছেন।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *