বরিশাল অফিস : খতনা করাতে গিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর এবার বরগুনা জেলার বামনা উপজেলায় একটি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রসূতি ও তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
তারা জানান, সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে সুন্দরবন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয় প্রসূতি মেঘলা আক্তারকে। অনুমোদনহীন এই হাসপাতালে তাকে সিজার অপারেশন করেন এক হাতুড়ে ডাক্তার। ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গতকাল ঐ হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ও আশপাশে হাজার হাজার অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধভাবে ব্যবসা করলেও স্বাস্থ্য বিভাগ ঠিকমতো মনিটরিং করছে না। উল্টো তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দেখভাল করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তারা রয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি। কিন্তু এসব কমিটি ঠিকমতো কাজ করছে না। মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৯০ ভাগ কর্মকর্তা নিয়মিত নির্ধারিত হারে মাসোহারা পেয়ে থাকেন। এ কারণে আয়ান ও মেঘলা আক্তারের মতো কত মানুষ যে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে তার কোন হিসাব নেই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দায়িত্বে অবহেলা, ভুল চিকিৎসায় যারা জড়িত এবং এসব মনিটরিং যারা করছেন না তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে, জেল-জরিমানা করে কিছুই হবে না। এদের কারণে শিশু আয়ান ও প্রসূতি মেঘলার মতো প্রতিদিনই অনেকের জীবন যাচ্ছে, এটা হত্যার শামিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা (ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট) নিতে হবে। তাহলেই অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক করে মানুষ মারার বাণিজ্য কমে আসবে বলে তারা জানান।
এদিকে অবৈধ ও অননুমোদিত সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে অনেক সমস্যা রয়েছে। আমি বলেছি দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল , ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার-এগুলো চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না। কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য।’