শিরোনাম

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

Views: 69

বরিশাল অফিস :: পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত রাঙ্গাবালী উপজেলা। প্রকৃতি যেন সাজিয়ে রেখেছে এর উপকূল। সাগর, নদী, বালুচর, পাখপাখালি ও বন্যপ্রাণী একসাথে দেখতে পাওয়া যায় এখানে। সব মিলে উপভোগ করার মতো একটি স্থান রাঙ্গাবালী।

পর্যটকরা মনে করেন, সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগে এই স্থানটি হতে পারে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু। রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রতিনিধি মো: রফিকুল ইসলামের পাঠানো তথ্যে, নয়া দিগন্ত পত্রিকায় থাকছে আজকের বিশেষ দর্শনীয় স্থান ও রাঙ্গাবালীর কিছু তথ্য।

রাঙ্গাবালীর অবস্থান : পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূল উত্তরে চালিতাবুনিয়া নদী, আগুনমুখা নদী ও চর বিশ্বাস, পশ্চিমে রামনাবাদ চ্যানেল ও কলাপাড়া উপজেলা এবং পূর্বে চরফ্যাসন উপজেলার চর কুকরী-মুকরী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

উপজেলার নামকরণ : রাঙ্গাবালী উপজেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে কথিত আছে যে, সাগরবক্ষে নতুন বালুচর সৃষ্টি হয়। এই বালুচরের বালু ছিল লাল। এই ‘লাল’ শব্দটি আঞ্চলিক ভাষায় রাঙ্গা নামে পরিচিত। এ থেকে রাঙ্গাবালী নামের উৎপত্তি। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৭৮৪ সালে কতিপয় রাখাইন জনগোষ্ঠী আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন থেকে এ অঞ্চলে জনবসতি শুরু হয়। উপজেলার উৎপত্তি : ২০১১ সালের ৭ জুন ন্যাশনাল ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্ম- নিকারের ১০৫তম সভায় রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। ওই বছরের ১৩ জুন রাঙ্গাবালীকে উপজেলা ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়।

সোনারচর দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত : পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে সোনারচর। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের মোহনায় বঙ্গোপসাগরে সোনারচর দ্বীপটির অবস্থান। সোনারচর পূর্ব-পশ্চিমে চার কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে আড়াই কিলোমিটার। মোট আয়তন ১০ বর্গকিলোমিটার। গোটা দ্বীপটি যেন সাজানো-গোছানো এক বনভূমি। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনারচরে শুধু নানান ধরনের বৃক্ষের সমাহারই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও। হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্য শুয়োর, বানর এ বনের বাসিন্দা। সেই সাথে রয়েছে চার কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা। একই স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়, যা বিশ্বে বিরল। এ অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বন মৌচাষিদের মধু আহরণের অভয়ারণ্য।

চর হেয়ার দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত : সোনারচর সংলগ্ন মাত্র দুই কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে চর হেয়ার সমুদ্র সৈকত ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় চার দশমিক ছয় বর্গকিলোমিটারের দ্বীপের তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত একেবারেই দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরমুখী। ছোট বড় অসংখ্য লাল কাঁকড়ার অভয়ারণ্যের এই দ্বীপের অন্যতম বিশেষ দিক হলো একই স্থানে দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত ও সুর্যোদয় দেখা যায়।

জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত : উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জাহাজমারা সৈকত। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি সবুজ বন। জাহাজমারা সৈকতে সারি সারি ঝাউবন আর পাখ-পাখালির কলরবে মুখরিত পরিবেশ। চিকচিকে বালুতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর সাদা ঝিনুকের সমারোহ। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশিয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী।

চর তুফানিয়া : জাহাজ মারা সমুদ্র সৈকতের সামান্য দক্ষিণেই রয়েছে চর তুফানিয়া দ্বীপ। চার দিকে নদী ও সাগর আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ বনাঞ্চলে সৃষ্ট এই দ্বীপ। প্রায় চার কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘিরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান। সেখানেও প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশিয়ালসহ নানা ধরনের পাখপাখালি আর বন্যপ্রাণী। সাগর ও নদীর তীরে অবস্থিত সহজ সরল মানুষের বসবাস। যারা বেশ অতিথিপরায়ন। রাঙ্গাবালী সদরে স্বল্প খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

যাতায়াত ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে রাঙ্গাবালী আসার জন্য দোতলা লঞ্চ আছে। যা প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়। আর আছে সরাসরি গাড়ি, যা গলাচিপার হরিদেবপুর পর্যন্ত আসে। তারপরে লঞ্চে করে রাঙ্গাবালী আসতে হবে অথবা আসা যাবে মোটরসাইকেলেও। সরাসরি গাড়িতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বা সড়ক পথ না থাকায় রাঙ্গাবালী উপজেলা কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে নৌপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *