মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ফি বছর বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে নতুন বাড়িঘর আর বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে কমছে ফসলি জমি।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগ থাকলেও সচেতনতার অভাবে উপজেলার জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখছে না। এখনো দুর্গম ও চরাঞ্চল এলাকার বসতিদের ধর্মান্ধ ও কুসংস্কার আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। ফলে প্রতি বছর লোকসংখ্যা বৃদ্ধিতে নির্মাণ হচ্ছে নতুন নতুন বাড়িঘর। অপর দিকে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না থাকায় শত শত একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে ফসলি জমি ।
সরেজমিন ঘুরে দশমিনা উপজেলার চর-বোরহান, চর-শাহজালাল ও চর হাদিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক চিত্র পাওয়া গেছে। এসব চরে প্রায় ১১ হাজার লোকের বসতি। প্রতি পরিবারে গড় লোকসংখ্যা ছয়-সাতজন। বেশি সন্তান বেশি উপার্জনে বিশ্বাসী চরবাসী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করতে নারাজ। আধা সচেতন মায়েরা উপজেলা সদরে এসে গোপনে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ইনজেকশন কিনে নেয়। তাও আবার স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে ব্যবহার করতে হয় তাদের। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করায় স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকারও হতে হয়। চরবোরহানে এমনই একজন নির্যাতিত নারীর সন্ধান পাওয়া যায়।
স্থানীয় আলম ফকিরের স্ত্রী ফেরেজা বেগম (৩৪)। তার বিয়ে হয় ১৩ বছর বয়সে। বাল্যবিয়ে হলেও ফেরেজা এখন তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী। তার স্বামী আরো সন্তান নিতে চায়।
এ চরের বারেক গাজীর স্ত্রী শাহিনুরের ছয় সন্তান, হেলেনার পাঁচ সস্তান। এদের প্রত্যেকের স্বামী আরো সন্তান নিতে চায়। তাদের ধারণা বেশি সন্তান হলে লাঠিয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষা হবে, পাশাপাশি আয় রোজগার বেশি হবে।
চরশাহজালালের পাঁচ সন্তানের জননী হেলেনা বলেন, ‘পোলা মাইয়া জে দ্যায় হেয়ই ন্যয়ুইন্না মালিক, বন্দা অয়ুইন্না ওসুদ পত্তরে খোদায় ব্যারাজি অয় ও গুনা অয়।’ চরহাদির মাজেদা বিবি ছয় সন্তানের জননী। তার ছেলে নাই একটিও। তাই তিনি ছেলে না হওয়া পর্যন্ত যত সন্তান নিতে হয় ততবার নিবেন।
পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জরিপে দশমিনা উপজেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮জন। বসতবাড়ির সংখ্যা ২৮হাজার ৪৯০টি ।
উপজেলা স্বাস্থ্য জরিপ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জরিপে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মোট লোকসংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৮ জন। বসতবাড়ির সংখ্যা ৪৭ হাজার ৯১১টি। ফলে আট বছরে উপজেলায় লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ হাজার ৯১০ জন। বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ১৯ হাজার ৪২১টি।
উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর র্তীরবর্তী এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরে নদীর অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার বীজ বর্ধন খামার, বাঁশবাড়িয়ার ঢনঢনিয়া, হাজির হাট, আউলিয়াপুর, চরঘূূর্ণী, চরহাদি ও চর-বোরহানসহ মোট এক হাজার ৭৯৪ একর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ বীজবর্ধন খামারের আওতায় ১ হাজার ৪৪ একর জমি থাকলেও এবার চাষাবাদ করা হয় ৩৫০ একর জমি। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৬৯৪একর জমি।
দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহামুদ লিটন বলেন, চরহাদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
তিনি আরো বলেন, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে চরে নোনা পানি ঢুকে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে।
চরবোরহান ইউপি চেয়ারম্যান নজির আহমেদ সরদার বলেন, চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝড় জলোচ্ছ্বাসে নদী ও সাগরের নোনা পানি রোধে চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা একান্ত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাফর আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরাঞ্চলে নোনা পানি ঢুুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাফিসা নাজ নীরা বলেন, পটুয়াখালী জেলা সভা ও দশমিনায় সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে জিওব্যাগের মাধ্যেমে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। আর নদীর ভাঙন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা – গলাচিপা) আসনের সংসদ সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা সাজু বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠানো হয়েছে। নদীর ভাঙন রোধসহ বেড়িবাঁধের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।