চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: বহু বছর ধরে অবহেলিত ছিল দোয়েল চত্বর এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা ঢাকা গেট বা ঢাকা ফটক। সচেতন নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল সংস্কার করে এ গেট রক্ষার। এরই প্রেক্ষিতে গেটটির সংস্কার কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। সংস্কার কাজ শেষে এটি সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমির রাস্তায় জাতীয় তিন নেতার মাজারের সাথেই অবস্থান ঢাকা গেটের। ঢাকা গেট ঠিক কবে, কারা, কী উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছিলেন এ নিয়ে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
তবে বেশিরভাগেরই মত এটা মোগল আমলে নির্মিত হয় মীর জুমলার হাত ধরে এবং তখন এটিই ছিল ঢাকার প্রবেশ পথ।
এখনকার আধুনিক ঢাকায় নজর দিলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢাকা গেটের অবস্থানে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঁকি দেয়, শহরের মাঝখানে এই গেটটি কেন?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সংস্কার কাজের পরামর্শদাতা অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেন, মোগলদের সময়ে মীর জুমলার শাসনামলে ঢাকা শুরু হয় এই গেট থেকে, বুড়িগঙ্গার তীর নয়। লুটপাটের ভয়ে একটু ভেতর থেকেই শুরু হয় শহর।
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন মীর জুমলা। সে সময় বাংলার রাজধানী ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়।
বিবিসি বাংলার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাপিডিয়া – বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষে ঢাকার ইতিহাস অধ্যায়ে ঢাকা গেট সম্পর্কে বলা হয়েছে, এখানে বেশ কয়েকটি নির্মাণ কাজের সঙ্গে মীর জুমলার নাম জড়িয়ে আছে। প্রথমে মীর জুমলার গেট পরবর্তী সময়ে যা ‘রমনা গেট’ নামে পরিচিত হয়।
বাংলাপিডিয়া বলছে, উত্তরদিক থেকে শহরটিকে রক্ষার জন্যই সম্ভবত এ গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। মীর জুমলা মগ দস্যুদের আক্রমণ থেকে শহর ও শহরতলিকে রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন।
ঠিক কত সালে ঢাকা গেট নির্মিত হয় সে বিষয়টি এখানে উল্লেখ করা হয়নি।
১৮২৫ সালে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডাউস প্রথমবার এ গেটের সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে সময় এটি রমনার প্রধান প্রবেশ পথ হয়ে পড়ে। সে কারণেই তখন এর পরিচিতি হয় রমনা গেট নামে।
এরপর পাকিস্তান আমলেও আরেক দফা সংস্কার হয় রমনা বা ঢাকা গেট। তারপর দীর্ঘসময় অযত্ন, অবহেলায় থেকে প্রায় ধ্বংসের পথে ছিল প্রাচীন এই স্থাপত্য নিদর্শন। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর আরও আড়ালে চলে যায় প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্যের এই অংশটি।