মো: আল-আমিন (পটুয়াখালী): পটুয়াখালী জেলার দশমিনায় গ্রামীণ নারীদের চরম দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারি সহায়তা কর্মসূচির আওতায় অসচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তদের দুই বছর মেয়াদে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভিডব্লিউবি চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন আটকে দিয়েছেন।
বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেজবুক পেজে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ নামের তালিকাও প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত নামের তালিকা ধরে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসচ্ছলদের পরিবর্তে উকিল, ব্যবসায়ী, চালের ডিলার, সাংবাদিক এবং স্বচ্ছল পরিবারসহ প্রভাবশালীদের নাম ভিডব্লিউবি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রতি বছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি ১ জানুয়ারি থেকে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ। এ বছর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভিজিডি কার্যক্রমের নাম পরিবর্তন করে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) করেছে। দশমিনা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে মোট ৩ হাজার ৮৭২টি ভিডব্লিউবি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ ৩ হাজার ৮৭২টি নাম যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করেন। পরে তা অনুমোদনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়।
নিয়ম অনুযায়ী আগের বছর কোনো ব্যক্তি সুবিধা নিলে ও সচ্ছল কোনো পরিবার সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হবেন না। কিন্তু দশমিনায় বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। ওই তালিকায় উকিল, সাংবাদিক, জুয়েলারি ব্যবসায়ী এবং চালের ডিলারসহ প্রভাবশালী ও অধিকাংশ ধনী পরিবারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত অসচ্ছল এবং দুঃস্থ নারীরা।
ভিডব্লিউবি তালিকায় অনিয়ম থাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুমোদন না দিয়ে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আটকে দেয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া হলে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।
সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রিপন কর্মকার বলেন, ‘কেউ মারা গেলে বা এলাকা ছেড়ে চলে গেলে তখন আমরা কী করবো। এ কারণে আমাদের অতিরিক্ত কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। তাই আমার ভাই এবং নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
দশমিনা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইকবাল মাহামুদ লিটন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য উপজেলায় পাঠিয়েছি। এ তালিকায় এদের নাম আসলো কীভাবে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ‘পরিপত্র মেনে যাচাই-বাছাই করার বিষয়ে আমি জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের বলেছি। টাকা লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছি বিভিন্ন উঠান বৈঠকে ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরও অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বঞ্চিতদের নেওয়া ও অযোগ্যদের বাদ দিতে। যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’