মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী : পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার মোসা. লাকী আক্তার নামের এক নারী নাম পরিবর্তন করে দুই বার ভোটার নিবন্ধন করেছেন। অন্যের সার্টিফিকেট দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে নিয়েছেন চাকরি।
ওই নারীর পৃথক নাম ব্যবহার করে ভোটার নিবন্ধনের প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন অফিস।
পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বাউফল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বাদি হয়ে ১১ জানুয়ারি বাউফল থানায় ওই নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মোসা. লাকী আক্তার পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়ন পাকডাল গ্রামের মো. আলী আজম হাওলাদারে মেয়ে।
নির্বাচন অফিস ও মামলা সূত্রে জানা যায়, মোসা. লাকী আক্তার ২০০৭ সালে প্রথম ভোটার নিবন্ধন করেছেন। তাতে দেখা যায় পিতা মো. আলী আজম হাওলাদার, মাতা মোসা. শাহানারা বেগম, স্বামী মো. হাবিবুর রহমান। পেশায় গৃহিনী, শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। জন্ম তারিখ ০১/০২/১৯৮৭ ইং। গ্রাম পাকডাল, ইউনিয়ন কাছিপাড়া, উপজেলা বাউফল এবং জেলা পটুয়াখালী।
পরে সামিয়া নামের একজনের সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি চাকরি নেন লাকী আক্তার। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট সব তথ্য গোপন করে সামিয়া নামে পুনরায় ভোটার নিবন্ধন করেন তিনি। এতে উল্লেখ করা হয়, তার পিতা আলী আহমেদ, মাতা মৃত হেলেনা বেগম, স্বামী মো. হবিবুর রহমান। পেশা গৃহিনী, শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক, জন্ম তারিখ ০১/০২/১৯৯৭ ইং। গ্রাম পাকডাল, ইউনিয়ন কাছিপাড়া, উপজেলা বাউফল এবং জেলা পটুয়াখালী।
বাউফল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ফিঙ্গার প্রিন্ট ক্রস গ্রুপ ম্যাচ যাচাইয়ে মোসা. লাকী আক্তার/ সামিয়া দ্বৈত ভোটার হিসেবে শনাক্ত হন। তদন্ত প্রতিবেদনটি জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠান।
প্রতিবেদনে বিবাদী নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি বাউফল থানায় মামলা হয়েছে।
এ ঘটনার ব্যাপারে জানতে লাকী আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বজনরা জানান, চাকরির জন্য মোসা. লাকী আক্তার বয়স কমিয়ে এবং নাম পরিবর্তন করে সামিয়া রেখেছেন। ওই নামে দ্বিতীয় বার ভোটার হন ২০১৭ সালে। সামিয়া বাউফল কাছিপাড়ার পাকডাল (২ ইউনিট) পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে চাকরি নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, লাকী পলাতক রয়েছে। কাছিপাড়া পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি এখানে সামিয়া নামে চাকরি করতেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের দিন থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপুস্থিত রয়েছেন।
বাউফল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন জানান, লাকী আক্তার কর্মস্থলে যোগদান করেন বলে তার স্বামী হবিবুর রহমান তাকে জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. জসিম উদ্দিন মুকুল বলেন, ঘটনা জানার পর তাকে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছে। জবাব পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত কাজ চলছে।