শিরোনাম

বাউফলে ভুয়া নামজারি: জমির প্রকৃত মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে

Views: 41

 

মো:আল-আমিন, পটুয়াখালী:  বাউফলের দাসপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দেয়া ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিয়ে কয়েক লাখ টাকার জমি নামজারি করিয়ে কয়েকটি পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করার পায়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করেও কোনো সুফল পায়নি ওই পরিবারগুলো। অনৈতিকভাবে চেয়ারম্যানের দেয়া ভুয়া ওয়ারিশ এবং সহকারী কমিশনারের একগুয়েমির কারণেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খাজুরবাড়িয়া গ্রামের ১২২ নম্বর জেএলের ১২১৯ খতিয়ানের ৬৬০৪, ৭৩৪৬ ও ৭৩৪৭ এবং ১২২০ খতিয়ানের ৬৬০১, ৬৬০৪, ৬৬০৮ এবং ৬৬২৪ নম্বর দাগের মোট ৫.৭৮ একর জমির পৈত্রিক মালিক যথাক্রমে গোকুল মন্ডল, সুধন্য মন্ডল, তপন মন্ডল এবং সুদেব মন্ডল। সিএস, আরএস এবং এসএ খতিয়ানেও তাদের রেকর্ড ঠিক রয়েছে। সহজ-সরল প্রকৃতির ওই পরিবারগুলো পূর্বপুরুষ থেকে ওই জমি ভোগদখল করে আসছেন। ওই বাড়িতে ওকরাইত হিসেবে বসবাস করা সুবল মিস্ত্রি গংরা গোপণে ওই বাড়ির মালিক দাবি করে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান এম এন জাহাঙ্গীর হোসাইনকে দালালদের মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে এবং অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মে বাউফলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজেদুর রহমানের মাধ্যমে নামজারি করিয়ে ২০২৭ নম্বর নতুন একটি খতিয়ান খোলেন। এরপর জমি দখল করতে গেলে ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের কথা জানাজানি হয়।

এরপর প্রকৃত মালিকরা নামজারি বাতিল চেয়ে সহকারী কমিশনার প্রতীক কুমার কুন্ডুর কাছে আবেদন করলে তিনি কালাইয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. হামিদুল হক বাচ্চুকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলে ওই কর্মকর্তা তদন্ত করে সুবল গংরা চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়েছেন এবং সেই সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণা করে নামজারি করে ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মিথ্যা ও প্রতারণা করে নামজারি করেছেন উল্লেখ থাকলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পূর্বের সহকারী কমিশনারের আদেশ বহাল রাখেন। এ ঘটনায় আবেদনকারীদের পরিবারসহ এলাকার সাধারণ মানুষ হতভম্ব হয়ে যান।

একটি সূত্র জানায়, বাউফল পৌর শহরের বিএনপির এক প্রভাশালী নেতা কর্তৃক সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ডু প্রভাবিত হয়ে ওই রায় দিয়েছেন। এদিকে চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত মিথ্যা ওয়ারিশ সার্টিফিকেট বাতিল করে প্রকৃত মালিকদের ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ও বয়োজ্যেষ্ঠরা চেয়ারম্যান এম এন জাহাঙ্গীরের কাছে লিখিত অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করছেন না।

ভুক্তভোগী সুদেব মন্ডল গংরা জানান, আমরা নিজ ভূমিতে পরবাস হয়ে পড়েছি। আমরা ঠিকমতো খেতেও পারি না। চেয়ারম্যানের কাছে ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য বহুদিন ঘুরেছি। চেয়ারম্যানের দালালরা ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য কয়েক লাখ টাকা দাবি করছেন। চেয়ারম্যান ও ভূমি অফিস যোগসাজস করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যান এম এন জাহাঙ্গীর জানান, আমাকে ভুল বুঝিয়ে সুবল গংরা ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়েছে। আমি ওই ওয়ারিশ সার্টিফিকেট বাতিল করে দেব। প্রকৃত জমির মালিকদেরকে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্ন করা হলে, দেখছি বলে জানান। ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য আমি কোনো টাকা-পয়সা চাইনি। কেউ দাবি করলে সেটার দায়দায়িত্ব আমার না।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ড জানান, আবেদনকারীরা কোনো ওয়ারিশ সার্টিফিকেট দেখাতে পারেনি। তাই পূর্বের আদেশ বহাল রেখেছি। আপনার অফিসেরই ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা প্রতারণা করে ভুয়া ওয়ারিশ সাটিফিকেট নিয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
সেই প্রতিবেদনের আলোকে কি আপনি পূর্বের আদেশ বহাল রাখতে পারেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উল্লেখ্য, বাউফলের সাধারণ মানুষ কিছু চেয়ারম্যানদের থেকে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নেয়া থেকে শুরু করে ভূমি কর দেয়া, নামজারি করাসহ অন্য কাজে ভূমি অফিসের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাউফলের ভূমি অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেন।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *