বরিশাল অফিস :: উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটি আগের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো ও জনবল দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম। অথচ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে মঞ্জুরকৃত পদ রয়েছে, তার অধিকাংশ পদই খালি। আর এর মধ্যে সব থেকে বেশি খালি রয়েছে চিকিৎসকদের পদ। এ ছাড়া তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির পদে জনবল সংকট চরমে। মামলা জটিলতার কারণে মাস্টাররোলেও জনবল নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসকদের ৫৮টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩ চিকিৎসক, বাকি ৩৫ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন যাবৎ খালি। একই অবস্থা অন্যান্য পদেও।
হাসপাতালে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণি মিলিয়ে সর্বমোট ৩৩০টি পদ থাকলেও এর মধ্যে ১০৩টি পদ দীর্ঘদিন যাবৎ খালি রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসকদের যে সব পদ খালি রয়েছে তার মধ্যে আছে সহকারী পরিচালক, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেশিয়া), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (রেডিওলজি ও ইমেজিং), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), আবাসিক ফিজিশিয়ান, আবাসিক সার্জন, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, অ্যানেস্থেসিস্ট (তিনজন), প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, মেডিক্যাল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার (সাতটি), ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার (চারটি) ও ডেন্টাল সার্জন (একটি)।
এ ছাড়া সেবা তত্ত্বাবধায়কের একটি, উপসেবা তত্ত্বাবধায়কের একটি, পরিসংখ্যান কর্মকর্তার একটি, নার্সিং সুপারভাইজারের দুটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স/স্টাফ নার্স চারটি, সহকারী নার্স তিনটি, সহকারী হিসাবরক্ষক একটি, অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর একটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ফার্মা) একটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) একটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিও), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (বায়োকেমিস্ট), মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইসিজি) তিনটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (অ্যানেস্থেসিয়া) তিনটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ডায়ালাইসিস) তিনটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (বায়োমেডিক্যাল) তিনটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইকো) তিনটি এবং কার্ডিওগ্রাফারের দুটি পদ খালি রয়েছে।
প্রতিদিন হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা নেয় এখানে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হলেও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পয়োনিষ্কাশনের চিত্র অত্যন্ত ভঙ্গুর। বাথরুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা হুমকিতে ফেলেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীরা আরও অসুস্থ হচ্ছে।
এরপরও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের যে জনবল বরাদ্দ আছে তারও অধিকাংশ পদ খালি। প্রতি মাসে আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করে চিঠি দিয়েছি। ২৫০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসকদের যে পদগুলো আছে, সব পদে চিকিৎসক থাকলে কিছুটা হলেও কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া সম্ভব হতো। এ ছাড়া হাসপাতালের ক্লিনার, সুইপারের যেসব পদ রয়েছে, সেসব পদেও কর্মচারী না থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এমনিতে বিপুলসংখ্যক রোগী, এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রোগীর আত্মীয়-স্বজন। সব মিলিয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের সমাগাম হচ্ছে। ফলে এত মানুষের সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাও এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।