শিরোনাম

বরিশালে অসহায় মানুষের ভরসা “আশা মনি”

Views: 43

বরিশাল অফিস :: কারো কাছে তিনি আশা আপু, কারো কাছে আশা দিদিমনি, আবার কারো কাছে শুধুই আশা মনি। তবে যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন, তিনি তাতেই সারা দিচ্ছেন। সদা হাস্যোজ্জল সাদামনের এ মানুষটি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সবার পরিচিত একটি মুখ। জনপ্রতিনিধি না হয়েও শুধু নিজের ইচ্ছে শক্তি আর স্বামীর অকুন্ঠ সমর্থনে টানা ১৮ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। প্রতিমাসে একবার নিজ বাড়িতে সভা করে এলাকাবাসীর সমস্যার কথাশুনে তা লিখে রাখেন আশা মনি। পরবর্তী একমাস ওইসব সমস্যা সমাধানে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে এলাকাবাসীর কাছে মুজিব প্রেমিক সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা মনি আজ একমাত্র আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের আগরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মিয়াবাড়ির সন্তান মরহুম আনাম মিয়ার একমাত্র মেয়ে আশা মনি।

উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত করোনাকালীন সময়ে ব্যবসায়ী স্বামী কামরুজ্জামান স্বজলের দেয়া অর্থ, নিজের স্বর্ণলংকার বিক্রি এবং সঞ্চয় করা অর্থ দিয়ে তিনি উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই তিনি উপজেলার অসহায় ও দুঃস্থ শীতার্তদের মাঝে পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণ করেছেন।

বিগত শারদীয় দুর্গা উৎসবের সময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই হাজার নারীদের মাঝে নতুন শাড়ী ও বিভিন্ন মন্দিরে সাধ্যমতো অর্থ বিতরণ করেছেন। স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে আশা মনি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। সেই থেকে অগণিত কর্মী সমর্থক নিয়ে রাজপথের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে দলীয় কর্মসূচীতে রয়েছে তার সক্রিয় অংশগ্রহন।

মাত্র ২১দিন বয়সে বাবাকে ও সাড়ে তিনবছর বয়সে মাকে হারানো আশামনি বড় হয়েছেন তার চাচাদের সংসারে। ২০০৯ সালে একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড রমজানকাঠী গ্রামে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর ব্যবসার সুবাধে শহরের পরিবেশে আয়েশি জীবনযাপন করার সুযোগ হলেও শুধুমাত্র তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ শুন্য আগরপুরে দলকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা এবং মরহুমর বাবার স্মৃতি রক্ষায় আশা মনি থেকে যান গ্রামে। এতেই তার জীবনে নেমে আসে লোমহর্ষক ঘটনা।

আশা মনির চাচা ও স্বামীর পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাকে (আশা) আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরে আসার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কারণ তারা সবাই অন্যদলের সমর্থক। কিন্তু আশা মনিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আশা মনি’র চাচাদের ইন্ধনে তার স্বামীর পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য আশা মনিকে হুমকি প্রদান করতে থাকেন।

পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী ভরসাকাঠী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন আশা মনি’র স্বামী। সেখানে বসেই দীর্ঘদিন থেকে স্বামী কামরুজ্জামান স্বজলের অকুন্ঠ সমর্থনে দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা। একজন জনপ্রতিনিধি না হয়েও নিঃস্বার্থ ও পরোপকারী মৌরিন আক্তার আশা দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী স্বামীর অকুন্ঠ সমর্থনে সমাজ সেবায় বিভিন্নক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি মানুষকে সহজেই আপন করে নিতে পারেন। যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। শিক্ষা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় তিনি একাধিক পদকে ভূষিত হয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে তিনি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের সদস্যদের সরকারি বিভিন্ন ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি অসংখ্য পরিবারকে গভীর নলকূপ পাইয়ে দিয়েছেন। গ্রামের অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারগুলোর একমাত্র আশার আলো আশা মনিকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে উপজেলাবাসী মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে প্রচার বিমুখ আওয়ামী লীগ নেত্রী মৌরিন আক্তার আশা মনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে জনপ্রতিনিধি হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। শুধু নিজের ইচ্ছে শক্তি আর ভাল একটা মন থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, আমি সর্বদা মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করছি। তার দেখানো পথেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্ঠা করছি।

গ্রামের অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারের কেউ যেন বলতে না পারেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে না খেয়ে আছি, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের কল্যাণে কাজ করছি। বিগত ১৫ বছর ধরে আশা মনি প্রতিটি রমজান মাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার শহীদ পরিবারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার জন্য আশা মনি প্রতিদিন ৫০ জন ব্যক্তির জন্য সেহরি এবং ৫০ জনের ইফতারীর আয়োজন করে সর্বদা প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধেও তিনি কাজ করছেন। বাল্য-বিয়ের কুফল সম্পর্কে গ্রামের নারীদের তিনি সচেতন করছেন।

বঙ্গবন্ধু প্রেমিক ও বাবুগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক মৌরিন আক্তার আশা বলেন, আসলে কোনো সম্মাননার জন্য আমি কাজ করিনা। সমাজের অবহেলিত ও দুঃস্থ মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী হিসেবে যখন ওইসব মানুষের হাতে প্রধানমন্ত্রীর নাম বলে তার পক্ষ থেকে কিছু তুলে দিতে পারছি, তখনই নিজের কাছে খুব ভালো লাগে।

জনপ্রতিনিধি হওয়া প্রসঙ্গে মৌরিন আক্তার আশা বলেন, বর্তমানে পুরো উপজেলাবাসী চাচ্ছেন আমি যেন আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করি। তবে আমি বলতে চাই, কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় আমি ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালবেসেছি।

তারপর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছি। দলের নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন, আমি জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। নতুবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী হিসেবে সমাজের অবহেলিত ও দুঃস্থদের জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাবো।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *