শিরোনাম

বরিশালে শিশুপার্কের জমিতে আ’লীগ নেতার অবৈধ বাজার

Views: 45

বরিশাল অফিস :: এ বারের সংসদ নির্বাচনের পর বরিশাল মহানগর ও সদর উপজেলায় আধিপত্য হারিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এর সঙ্গে অবৈধ আয়ের ক্ষেত্রগুলোরও হাতবদল হয়েছে। সাদিক অনুসারীদের হটিয়ে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপির অনুসারীরা।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা নগরীসংলগ্ন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী বাজারে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জমিতে অবৈধ মাছ বাজার ও স্পিডবোট ঘাট স্থাপন করেছে। সেখান থেকে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। জেলা পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি শহিদুল ইসলাম ওরফে ইতালি শহিদ দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

জানা গেছে, তালতলী বাজারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মালিকানাধীন ৯ একরের বেশি জমি বেদখল ছিল। কয়েক বছর আগে নদীর তীরঘেঁষা ওই জমির ওপর মাছ বাজার স্থাপন করা হয়। শেড করে সেখানে মাছের পাইকারি বেচাকেনা হয়। এটি উপজেলা পরিষদের তালিকাভুক্ত বাজার নয়। সাদিক আবদুল্লাহর সহযোগী মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। দুই বছর আগে গণপূর্ত বিভাগ জমি দখলমুক্ত করলে মাছ বাজারও উচ্ছেদ হয়। এর পর টুটুল লামছড়ি গ্রামগামী পাকা সড়কের পাশে মাছ বাজার বসিয়েছিলেন।

নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক আবদুল্লাহ আধিপত্য হারালে তালতলী বাজারের ওপরও নিয়ন্ত্রণ হারান তাঁর অনুসারী টুটুল। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদের নেতৃত্বে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা এটি দখলে নিয়েছেন। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তারা পাশেই শেখ রাসেল শিশু পার্কের জন্য নির্ধারিত জমির প্রাচীরের মধ্যে বাজার স্থানান্তর করেন। তালতলী থেকে মেহেন্দীগঞ্জগামী অনুমোদহীন স্পিটবোটের ঘাটও স্থানান্তর করা হয় সেখানে।

চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দীপক কুমার চ্যাটার্জি জানান, নদীর তীর ঘেঁষে চার একর জমিতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক করার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। সড়কের পাশে থাকা মাছ বাজারটি মাসখানেক আগে পার্কের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে স্থানান্তর করা হয়। আগে স্পিডবোট ভেড়ানো হতো তালতলীর বাজারসংলগ্ন পাকা ঘাটে। এখন পার্কের জমিতে ঘাট স্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাজরের মাছ ব্যবসায়ী কালু সিকদার জানান, আগে টুটুলের পক্ষে তিনিসহ কয়েকজন প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। মাসখানেক আগে শহিদুল ইসলাম দলবলসহ এসে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেন। এখন তারা নিজেরাই টাকা তুলছেন।

স্পিডবোট ব্যবসায়ী মো. আলী হোসেন জানান, পাঁচ বছর ধরে মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট বন্দর পর্যন্ত স্পিডবোট চলছে। কয়েকদিন আগে জেলা পরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম তাঁকে ফোনে জানিয়েছেন, এ ঘাটের চাঁদার টাকা এখন তাঁকে দিতে হবে।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ইউনিয়নের বাইরের লোকেরা মাছ বাজার থেকে টাকা তুলত। এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ টাকা তুলছে। অবৈধ বাজারটি শেখ রাসেল শিশু পার্কের জমিতে করা ঠিক হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তালতলী মাছ বাজার পরিষদের তালিকাভুক্ত নয়। বাজাটি শিশু পার্কের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। এটিকে তালিকাভুক্ত করে অন্যত্র স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপির মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়গুলো জানিয়ে তার হ্যোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *