শিরোনাম

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Views: 48

মো: আল-আমিন (পটুয়াখালী): উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটি আগের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো ও জনবল দিয়েই চলছে চিকিৎসা সোবার কার্যক্রম। অথচ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কর্মকর্তা – কর্মচারীদের যে মঞ্জুরকৃত পদ রয়েছে, তার অধিকাংশ পদই খালি। আর এর মধ্যে সব থেকে বেশি খালি রয়েছে চিকিৎসকদের পদ।

এ ছাড়া তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেনীর পদে জনবল সংকট চরমে। মামলা জটিলতার কারনে মাষ্টাররোলেও জনবল নিতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। ফলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আশা রোগীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসকদের ৫৮টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩ জন চিকিৎসক, বাকি ৩৫ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন যাবত খালি।
একই অবস্থা অন্যান্য পদগুলোতেও। হাসপাতালে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণি মিলিয়ে সর্বমোট  ৩৩০টি পদ থাকলেও এর মধ্যে ১০৩টি পদ দীর্ঘদিন যাবত খালি রয়েছে ।
হাসপাতালে চিকিৎসকদের যে সব পদ খালি রয়েছে তার মধ্যে আছে সহকারী পরিচালক, সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেশিয়া), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক),জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজি ও ইমেজিং), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), আবাসিক ফিজিসিয়ান, আবাসিক সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, অ্যানেস্থেটিস্ট (৩ জন), প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, মেডিকেল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার (৭টি), ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (৪টি) ও ডেন্টাল সার্জন (১টি)।

এ ছাড়া সেবা তও্বাবধায়কের ১টি, উপ-সেবা তও্বাবধায়করে ১টি, পরিসংখ্যান কর্মকর্তার ১টি, নার্সিং সুপারভাইজারের ২টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স/ স্টাফ নার্স ৪টি, সহকারী নার্স ৩টি, সহকারী হিসাব রক্ষক ১টি, অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(ফার্মা) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (বায়োকেমিস্ট), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইসিজি) ৩টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (অ্যানেস্থেশিয়া) ৩টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডায়ালাইসিস) তিনটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (বায়োমেডিকেল) তিনটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইকো) তিনটি এবং কার্ডিওগ্রাফারের ২টি পদ খালি রয়েছে।

এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর, স্টুয়ার্ড, ওয়ার্ড মাস্টার, রেকর্ড কিপার, লিলেনকিপার, টিকিটক্লার্ক, ড্রাইভার, স্টেরিলাইজার কাম মেকানিক, জুনিয়র মেকানিক কাম পাম্প অপারেটর, ক্যাশ সরকার, অফিস সহায়ক ১৩ জন, ডোম, বাবুর্চি ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১০ জন ও ইলেকট্রিসিয়ান ১ জন, ওয়ার্ড বয় ২ জন, আয়া ৭ জন, দারেয়ান ৯ জন, মালি ১ জন ও সুইপার ৪ জনের পদ খালি রয়েছে।এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহিঃবিভাগসহ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বর্তমানে কর্মরতরা।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হসপিটালের সুপার ডাঃ দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি থাকার পাশপাশি জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশো থেকে তিনশো এবং বহিঃবিভাগে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিদিন হাজারের অধিক রোগী চিকিৎসা নেয় এখানে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হলেও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়েই কাজ চালাতে। যে কারনে হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিস্কাসনের চিত্র অত্যান্ত ভঙ্গুর। সমস্ত বাথরুম গুলি ব্যবহারের অযোগ্য। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা হুমকিতে ফেলেছে স্বাস্থ্য সেবা। অসাস্থ্যকর পরিবেশ ভুক্তভোগী রোগীরা আরো অসুস্থ হচ্ছে।
এরপরও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের যে জনবল বরাদ্দ আছে তারও অধিকাংশ পদ খালি। প্রতি মাসে আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করে চিঠি লিখছি। ২৫০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসকদের যে পদগুলো আছে সব পদে চিকিৎসক থাকলে কিছুটা হলেও কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হতো। এছাড়া হাসপাতালের ক্লিনার, সুইপারের যেসব পদ রয়েছে সেসব পদেও কর্মচারী না থাকায় হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, এমনিতে বিপুল সংখ্যক রোগী, এরসঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রোগীর আত্মীয়-স্বজন। সব মিলিয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের সমাগাম হচ্ছে। ফলে এত মানুষের সৃষ্ট ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করাও এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *