শিরোনাম

ঝালকাঠিতে শীতলপাটি শিল্পে ফিরছে সুদিন

Views: 100

বরিশাল অফিস :: ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি তৈরির কারিগর পাটিশিল্পিদের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। অনেকেই পেয়েছেন সরকারি প্রশিক্ষণ। তাই নতুন করে আবারো কাজে ফিরতে শুরু করেছেন মুখ ফিরিয়ে নেয়া পাটিশিল্পিরা।

বর্তমানে শীতলপাটি তৈরিরী পাশাপাশি নতুন নতুন উপকরণ তৈরি করে নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে এই পেশার সঙ্গে প্রায় এক হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন। এটা শুধু তাদের পেশা না তারা একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে আছেন। দেরিতে হলেও সরকারি প্রশিক্ষণ পেয়ে আবারও স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন তারা।

ঝালকাঠির ব্র্যান্ডিং পণ্যের তালিকাভুক্ত সারাদেশের মানুষের কাছে পছন্দনীয় ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির একসময় রমরমা অবস্থা থাকলেও উচ্চ শ্রমমূল্য, প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে বিক্রি কমতে থাকায় বাধ্য হয়ে এই পেশার সঙ্গে জড়িত লোকজন অন্য পেশাকে বেছে নিয়েছেন।

জেলার নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউপির কামদেবপুর ও গোপালপুর গ্রামে অবস্থিত পাটিকর পাড়ায় একসময় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ এই পেশায় জড়িত ছিল। তাদের হাতে তৈরি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী শীতলপাটি দেশের গন্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও রফতানি হতো। তবে কালের পরিক্রমায় আধুনিক পণ্যের ভিড়ে শীতলপাটির চাহিদা কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বাপ দাদাদের ৫০০ বছরের পুরোনো পেশা অনেকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রবীণ পাটিশিল্পি বিবেকানন্দ জানান, আনুমানিক ৫০০ বছর আগ থেকে আমাদের এখানের লোকজন এই পেশার সঙ্গে জড়িত তবে সময়টা এর থেকেও বেশি হতে পারে। বর্তমানে ২শ পরিবার ও তাদের সদস্যরা এই পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী পাটিশিল্পি রয়েছেন। আগে আরো বেশি ছিল কিন্তু নানান সমস্যার কারণে অনেক পরিবার এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা শীতলপাটি তৈরি উপাদান পাইত্রা গাছ জমি থেকে কেটে প্রক্রিয়া করেন। তারপর নারী সদস্যরা তা দিয়ে শীতলপাটি বুনন করেন।

তিনি আরো বলেন, সরকার বিনা সুদে ঋণ দিলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো। কারণ শীতলপাটি তৈরির একমাত্র উপকরণ পাইত্রা গাছ। সেটা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য বড় বড় ড্রামের দরকার হয় এবং কাটার জন্য ধারালো ও ভারী বটি তৈরি করতে হয়। এছাড়া আমাদের জমিতে পাইত্রা গাছ লাগানো থাকে সেখানে তো অন্য কোনো কৃষি ফসল লাগাতে পারি না। সেটা পুষিয়ে নিতে বিনা সুদে আমরা ঋণ পেলে আমাদের উপকার হতো এবং পুরনো ঐতিহ্যবাহী পণ্য শীতলপাটি সগর্বে টিকে থাকতো।

পাটিশিল্পি মালতী রানি জানান, বংশপরম্পরায় এই পেশার সঙ্গে আমরা জড়িত আছি আমার শাশুড়ির বয়স ষাট বছরের উপরে হলেও তিনি এখনো শীতলপাটি বুনন করতে পারেন। কিন্তু এখন আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ শীতলপাটির সেই আগের মতো চাহিদা নেই। তবে এখন আমাদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাই আমরা শীতলপাটি তৈরির পাশাপাশি টিস্যুবক্স, কলমদানি, লেডিস ব্যাগ তৈরি করি। এর মাধ্যমে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে। এছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শীতলপাটি তৈরি নতুন কিছু ডিজাইন শেখানো হয়েছে। যেগুলো তৈরি করতে পারলে আমাদের পাটির চাহিদা বাড়বে। তাই এখন আমরা আর্থিক সচ্ছল হওয়ার চেষ্টা করছি। সবমিলিয়ে যদি বিক্রি ভালো হয় তাহলে আমাদের আবারন্ সুদিন ফিরবে।

ব্যবসায়ী সন্দিপ চন্দ্র বলেন, আমি এখানের পাটিশিল্পিদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শীতলপাটি সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। যার মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় শপিং মলও রয়েছে। তারা সেগুলো দেশের বাইরেও বিক্রি করে থাকেন। প্রতিমাসে এখানে গড়ে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার শীতলপাটি তৈরি হয়। এখন তারা শীতলপাটি তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য কিছু উপকরণ তৈরি করছেন সেগুলোর বেশ চাহিদা আছে এবং বিক্রিও ভালো হচ্ছে। সরকার আরো একটু সুনজর দিলে শীতলপাটি তার হারানো গৌরব সম্পূর্ণরূপে ফিরে পাবে এবং পাটিশিল্পিরাও তাদের পেশাকে আরো ভালোভাবে আকড়ে ধরবেন। প্রচারের মাধ্যমে যদি বিদেশে বিক্রি বাড়ানো যায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে শীতলপাটির ভালো ভূমিকা থাকবে।

নলছিটি উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম জানান, সরকার সব ঐতিহ্যবাহী পণ্যের প্রচার ও প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় নলছিটি উপজেলার ৬০ জন পাটিশিল্পিকে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পাটিশিল্পের মানোন্নয়নে করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের যে কোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন পাশে আছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *