শিরোনাম

বরিশালে অর্ধেক রেস্তোরাঁয় নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা

Views: 83

বরিশাল অফিস :: বরিশাল নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে-সেখানে গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় ভবন ভাড়া নিয়ে নির্মিত এসব রেস্তোরাঁর ৫০ শতাংশ বা অর্ধেকে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আইন অমান্য করে এসব রেস্তোরাঁ ব্যবসার কারণে নগরীতে প্রায়ই ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনা।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, নগরের অর্ধেক রেস্তোরাঁর ‘ফায়ার লাইসেন্স’ নেই। যেগুলোর আছে সেগুলো নিয়ম মানছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অগ্নিনির্বাপণের শর্ত না মানলে রাজধানীর বেইলি রোডের মতো ট্র্যাজেডি বরিশাল নগরীতেও যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী হাউসিং এলাকায় সুগার পেস্টি অ্যান্ড ডাইন রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দিন অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বে থাকা একজন ফায়ারম্যান জানান, রেস্তোরাঁর ভেতর সিলিন্ডার ছিল ৫টি। কিন্তু ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল না। তাঁরা রেস্তোরার মধ্যেই রান্না করেন। পাশে চলে এসি ও ফ্যান। এ কারণেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

ফায়ারম্যান আরও বলেন, তাঁরা আগুন নেভাতে গিয়ে রিজার্ভ পানি পান না। নগরের বাণিজ্যিক এলাকা কাঠপট্টি, চকবাজার, গির্জা মহল্লায় রাস্তার দুই পাশে যেভাবে দোকানগুলো বর্ধিত করেছে তাতে গাড়ি ঢুকানো যায় না।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর আব্বাস উদ্দিন বলেন, রেস্তোরাঁগুলোতে ফায়ার লাইসেন্সের শর্ত মানা হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি নগরের রূপাতলীতে সুগার পেস্টি অ্যান্ড ডাইন রেস্তোরাঁর কথা বলেন। রেস্তোরাঁটিতে গত শনিবার অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে কি পরিমাণ রেস্তোরাঁয় ফায়ার লাইসেন্স আছে তা তিনি বলতে চাননি।

আজ শনিবার নগরীর গির্জা মহল্লা, চকবাজার, কাটপট্টি, পুলিশ লাইনস, নবগ্রাম রোড, চৌমাথা, সিঅ্যান্ডবি রোড, রূপাতলী, নথুল্লাবাদ দুই শতাধিক রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশেরই ফায়ার এক্সিট বা জরুরি বহির্গমন পথ নেই। কোনো কোনো রেস্তোরাঁ আবার আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে।

এ সময় গির্জা মহল্লায় নতুন গড়ে ওঠা কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাঁয় আসা পশ্চিম কাউনিয়ার এক গৃহবধূ বলেন, ‘এই রেস্তোরাঁয় উঠতে হয় সরু সিঁড়ি দিয়ে। নেমে যাওয়ার আর বিকল্প পথ নেই। এটা আতঙ্কের বিষয়।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ভারী খাবার বিক্রির এই রেস্তোরাঁগুলোতে বড় বড় সিলিন্ডার থাকে। যেখানে বের হওয়ার পথ একটিই। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকায় এগুলো হলে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই। সম্প্রতি নগরের গির্জা মহল্লায় কাচ্চি ডাইন নির্মাণ করা হয়েছে বাণিজ্যিক এলাকায়। তাঁদের এক্সিট পয়েন্টও নেই।

রফিকুল আলম প্রশ্ন রেখে বলেন, অগ্নিনির্বাপণ আইন না মানলে ফায়ার সার্ভিস কেন সেসব দোকান বন্ধ করে দেয় না? রাজধানীর বেইলি রোডের মতো ট্র্যাজেডি ঠেকাতে হলে বরিশাল নগর প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে। এটি এখন জীবন-মরণের প্রশ্ন।

বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, রেস্তোরাঁ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দরকার হবে। কিন্তু নগরে যেসব নতুন রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, সেগুলোর অধিকাংশেরই ছাড়পত্র নেই। যে কারণে পরিবেশসম্মতভাবে এগুলো গড়ে উঠছে কি না— তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের (বরিশাল) সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, বরিশাল নগরীতে যে অপরিকল্পিত অবকাঠামোয় রেস্তোরাঁ গড়ে উঠছে সেগুলোর অধিকাংশই অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। শর্তানুযায়ী ফায়ার লাইসেন্স নিলেও অধিকাংশই নিয়ম মানছে না। নগরের শতকরা ৫০ ভাগ রেস্তোরাঁর ফায়ার লাইসেন্স নেই। আড়ালে-আবডালে এসব রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠার কারণ ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া। আমরা গত ডিসেম্বরে নগরীতে ফায়ার লাইসেন্স না থাকা দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। শিগগিরই আবার অভিযান পরিচালনা করা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *