শিরোনাম

আন্তর্জাতিক কিডনি দিবস আজ : ব্যয়বহুল চিকিৎসা বিপাকে রোগী

Views: 56

চন্দ্রদীপ ডেস্ক : কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা নিয়মিত ডায়ালাইসিস। দেশে সরকারিভাবে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সপ্লান্ট বা কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা আছে। আর সারা দেশে ২৫০টির বেশি ডায়ালাইসিস সেন্টারের মধ্যে সরকারি সেন্টারের সংখ্যা ৪৫টির মতো। সরকারি-বেসরকারিভাবে দিনে ১৫ হাজারের মতো রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব হয়। বাকি রোগীরা থেকে যান ডায়ালাইসিস সুবিধার বাইরে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাহিদার তুলনায় কিডনি প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিস সুবিধা কম থাকায় রোগীরা বেসরকারিতে ছুটছেন। সেখানে এ চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে শতকরা ১০ জন রোগী ডায়ালাইসিসের খরচ বহন করতে পারেন। এ ১০ শতাংশের মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশের ট্রান্সপ্লান্ট বা কিডনি প্রতিস্থাপনের অর্থনৈতিক সক্ষমতা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ ভাগ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন।

এমন বাস্তবতায় বিশ্বের মতো আজ (মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার) দেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কিডনি দিবস ২০২৪। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজি (আইএসএন) নির্ধারিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘কিডনি হেলথ ফর অল অর্থাৎ সুস্থ কিডনি সবার জন্য’। এবারের থিম ‘অ্যাডভান্সিং ইক্যুইটিবল অ্যাকসেস টু কেয়ার অ্যান্ড অপটিমাল মেডিকেশন প্র্যাক্টিস’।

দেশে কিডনি রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বিশেষজ্ঞদের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একজন নেফ্রোলজিস্ট থাকা দরকার। ১৭ কোটি মানুষের দেশে নেফ্রোলজিস্ট প্রয়োজন ৩ হাজার ৪০০ জন। বর্তমানে রোগটির চিকিৎসায় ২২০ জনের মতো অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকসহ ৩৬০ জন বিশেষজ্ঞ এবং ২০০ প্রশিক্ষিত নার্স আছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রাধক্ষ্য ও কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল জানান, কিডনি বিকল রোগীর বাঁচার একটাই পথ-ট্রান্সপ্লান্ট অথবা নিয়মিত ডায়ালাইসিস। এর জন্য ৮টি সরকারি পুরোনো মেডিকেল কলেজসহ জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল (নিকডু) কুর্মিটোলা জেনারেল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী, মুগদা জেনারেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মিডফোর্ডসহ কয়েকটি চিকিৎসাকেন্দ্রে এ সুবিধা আছে। এছাড়া কিছু সরকারি মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে দু-একটি করে মেশিন আছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪০০টির মতো ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এ সংখ্যা রোগী অনুপাতে খুবই অপ্রতুল।

রোগটির চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারিভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে হাসপাতালভেদে ৩ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগে। প্রতিস্থাপন করতে না পারলে রোগীকে সাধারণত সপ্তাহে এক থেকে তিনটা ডায়ালাইসিস নিতে হয়। প্রতি সেশন ডায়ালাইসিসের জন্য বেসরকারি স্কয়ার, ইউনাইটেড ও আজগর আলী হাসপাতালে ৬ হাজার টাকা লাগে। এছাড়া বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৫ হাজার ৩০০, ল্যাবএইড হাসপাতালে ৪ হাজার ৫০০, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল হাসপাতালে ৪ হাজার ২০০, পপুলারে ৫ হাজার, বারডেম জেনারেল হাসপাতালে ৩ হাজার ৬০০, সুপার স্পেশালাইজ হাসপাতালে ৩ হাজার ৫০০ এবং বিএসএমএমইউতে ২ হাজার ৮০০ টাকা লাগে। অন্যদিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)’ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০, ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনে ১ হাজার ৫০০ এবং গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ১ হাজার ১০০ টাকা গুনতে হয়। এর বাইরেও ওষুধ, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খরচ আছে।

কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) সভাপতি কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে যে ডায়ালাইসিস সেন্টার আছে, তা দিয়ে ১০-২০ ভাগ রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া যায়। এ ডায়ালাইসিস আবার এতটাই ব্যয়বহুল যে, ৯০ ভাগ রোগীই ছয় মাসের মধ্যে চিকিৎসার খরচ বহন করতে না পেরে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। এমন বাস্তবতায় কিডনি সুরক্ষা বিমা চালু জরুরি। এছাড়া কমপক্ষে এক হাজার ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি কিডনি রোগ প্রতিরোধে ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ ও কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *