শিরোনাম

পটুয়াখালীতে ৩০ টাকার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়

Views: 59

৩০ টাকার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :

‘তরমুজের মৌসুম সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এখনো ভালোভাবে বাজারে আসতে শুরু করেনি। আগাম জাতের তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে তাই দাম একটু বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কিনছেন। আমরাও আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।’

পটুয়াখালীতে আগাম জাতের তরমুজ বাজারে এসেছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে ইফতারি পণ্য হিসেবে রসালো ও সুমিষ্ট এ ফলের ব্যাপক কদরও আছে। ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। আকারভেদে প্রতি কেজি তরমুজ ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

মৌসুমের শুরুতে ও রমজানে এ ফলের উচ্চমূল্যের কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা। পটুয়াখালীতে তরমুজ চাষ প্রচুর পরিমাণে হলেও এখন তা ক্রেতাদের হাতের নাগালে নেই।

পটুয়াখালী শহরের উপকণ্ঠের কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে হেতালিয়া বাঁধঘাটে ও পটুয়াখালী নিউমার্কেট এলাকায় দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন।

হেতালিয়া বাঁধঘাট বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী বশির গাজী বলেন, ‘আমরা আড়ত থেকে গড় দামে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে আনি। কিন্তু কেজি দরে বিক্রি না করলে আমাদের লোকসান হয়।’
কারণ হিসেবে তিনি জানান, প্রতিটি তরমুজের গড় মূল্য পড়েছে ৩৫০ টাকার বেশি। এর মধ্যে ৪-৫ কেজি ওজনের ছোট আকারের, ৭-৮ কেজি ওজনের মাঝারি ও ৯ কেজির ওপরে বড় আকারের তরমুজ আছে। গড় মূল্য হিসেবে প্রতিটি তরমুজ কমপক্ষে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

তিনি আরও জানান, ছোট আকারের তরমুজ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, মাঝারি আকারের ২৫০-৩০০ টাকা ও বড় আকারের ৪০০ টাকার বেশি চাইলে ক্রেতারা কিনতে চান না। তবে কেজি হিসেবে বিক্রি করতে পারলে অনেক ক্রেতা কিনেন।

পাশের দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তরমুজের মৌসুম সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এখনো ভালোভাবে বাজারে আসতে শুরু করেনি। আগাম জাতের তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে তাই দাম একটু বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কিনছেন। আমরাও আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি।’

হেতালিয়া বাঁধঘাট বাজারে তরমুজ কিনতে আসা সদর উপজেলার মৌকরণ গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, ‘ইফতারে চাহিদা থাকায় তরমুজ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম নাগালের বাইরে।’

অপর ক্রেতা কালিকাপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পটুয়াখালীতে অনেক তরমুজ হয়। এত দামে আমাদের কেন তরমুজ কিনতে হবে তা দেখা উচিত।’

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রমজানে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তরমুজের বাজারদর নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয় কোনোভাবেই কেজি দরে খুচরা বাজারে তরমুজ বিক্রি করা যাবে না। যেহেতু ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে কেনেন তাই খুচরা পর্যায়েও পিস হিসেবে বিক্রি করতে হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনাও দেন। কিন্তু ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই খুচরা বাজারে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াখালী ভোক্তা অধিকার দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শোয়াইব মিয়া জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পটুয়াখালীর কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে। তরমুজ ব্যবসায়ীদেরকে কেজি দরে বিক্রি না করে পিস হিসেবে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষক ও বাজারে খুচরা পর্যায়ে তরমুজের দামের মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিস্তর ফারাক। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তরমুজ চাষিদের কাছ থেকে প্রতি ১০০ তরমুজ ৩০-৩৫ হাজার টাকায় কিনে আনেন। সে হিসেবে প্রতিটি তরমুজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বাজারে তা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার জাহাজমারা চরের তরমুজ চাষি জুলহাস মিয়া বলেন, ‘এ বছর তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। চার দিন আগে ২৫০ পিস তরমুজ পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। খুচরা বাজারে ওই তরমুজ কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, ‘পটুয়াখালীতে ৩০ টাকার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।’

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২২ হাজার ৩৯৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
এ বছর জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হয়েছে গলাচিপা উপজেলায় আট হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও, রাঙ্গাবালীতে পাঁচ হাজার ৯৪৩ হেক্টর, বাউফলে তিন হাজার ৩৮০ হেক্টর, কলাপাড়ায় এক হাজার ৫৮০ হেক্টর, দশমিনায় এক হাজার ৫২৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৭০৫ হেক্টর, দুমকিতে ২৫০ হেক্টর ও মির্জাগঞ্জে ৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *