শিরোনাম

সন্তানদের জন্মভিটা দেখাতে জার্মানি থেকে বরিশালে শংকর ব্যানার্জী

Views: 79

বরিশাল অফিস :: নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত শংকর ব্যানার্জী। তার আদি বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরে। দেশভাগের সময় জন্মভিটা ছেড়ে কলকাতা পারি জমালেও ভুলতে পারেননি নিজের জন্মভিটা। তাদের রেখে যাওয়া পঞ্চাশ একরের বেশি জমিতে এখন গড়ে উঠেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তারই আওতায় বর্তমানে আছে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও আঞ্চলিক হর্টিকালচার সেন্টার। কৃষি গবেষণায় নিযুক্ত এইসব প্রতিষ্ঠানের কম্পাউন্ডে আজও রয়ে গেছে শংকর ব্যানার্জীর জন্মসময়ের সেই পুরোনো স্মৃতি।

আর তা দেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিশ্বখ্যাত এই বিশেষজ্ঞ। এর আগে একবার কাজের সূত্রে নিজে আসলেও এবার নিয়ে এসেছেন পুরো পরিবারকে। গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) স্ত্রী গ্যাব্রিয়েল, দুই কন্যা শকুন্তলা ব্যানার্জী ও শর্মিলা ব্যানার্জী এবং জামাতা লুকাস ওয়ালপটকে নিয়ে ঘুরে গেছেন পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি।


শংকর ব্যানার্জী বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে ১৯৪৭ সালের ২৩ আগস্টের কথা। বরিশাল থেকে স্টিমারে কলকাতা গিয়ে আর ফিরে আসা হয়নি। তবে কুঁড়ি বছর আগের ২০০৩ সালে একবার কাজের তাগিদে চট্টগ্রামে এসে ওখানকার বন্ধুদের আমার জন্মভিটার কথা জানাই। বন্ধুদের আগ্রহে সেবার বরিশালে এসে খোঁজ করে আমাদের পুরানো বাড়ির সন্ধান পাই।

সেবার বাড়ি দর্শনের অভিজ্ঞতা পরিবারকে জানিয়েছিলেন। তা থেকেই স্ত্রী, সন্তান ছায়াঘেরা সুশীতল মায়াবী সেই বাড়ি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে। পরিবারের আগ্রহে এবার তাই এসেছি পরিত্যক্ত সেই স্মৃতিময় জন্মভিটা দেখতে।

শংকর ব্যানার্জী বলেন, আবার কবে আসা হয় জানি না। মেয়েরা দেখতে চেয়েছিল বলেই জন্মভূমিতে ফিরে আসা।

শংকর ব্যানার্জী বর্তমানে জার্মানির বাসিন্দা। বয়স ৮৫ বছর। বরিশাল যখন ছেড়েছিলেন তখন বয়স ৮ কি ৯ হবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারসহ তার পিতা প্রফুল্ল ব্যানার্জী ভারতের এলাহাবাদে বসবাস শুরু করেন এবং এলাহাবাদ কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। এলাহাবাদেই লেখাপড়া শুরু করেন শংকর ব্যানার্জী। সেখান থেকে ১৯৬০ সালে পড়াশোনার জন্য জার্মানিতে পাড়ি জমান। পড়াশোনা শেষে জার্মান মেয়ে গ্যাব্রিয়েলকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। প্রথমে টেক্সটাইল মিল করে ব্যবসা শুরু করলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ডিজাইনারকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তাতে সফলতা পান। তার ডিজাইনে জার্মান ছাড়ার বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

দ্বিতীয় দফায় রহমতপুরে সপরিবারে এসে নিজের ভিটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। রেখে যাওয়া বাড়ির কোন স্থানে মন্দির ছিল, কোন জায়গায় প্রতিমা ছিল, কোন জায়গায় বসতঘর ছিল সেসব বর্ণনা দেন মেয়েদের কাছে।

রহমতপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক অলিউল আলম বলেন, হর্টিকালচার সেন্টার যেখানে সেই জমি দেশভাগের আগে যাদের ছিল তারা এসেছিলেন বলে শুনছি। কিন্তু সে সর্ম্পকে আমি কিছুই জানি না। আমার সঙ্গে তাদের দেখা হয়নি।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল চন্দ্র কুন্ডু বলেন, ১৯৬০ সালের আগে এই জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। জমি একসময়ে মূখার্জীদের ছিল বলে শুনেছি। সরকারে পলিসির বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে দেশভাগের আগে এই জমি যাদের ছিল তারা এসেছিলেন বলে জেনেছি।

এই কর্মকর্তা বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারের কম্পাউন্ডে কিছু পুরাতন বাড়ির স্থাপনা এখনো টিকে আছে। তাছাড়া শংকর মুখার্জী যে স্থাপনার সামনে ছবি তুলেছেন তা হর্টিকালচার কম্পাউন্ডে। তিনি আমাদের কিছু জানিয়ে আসেননি। আসলে আমাদেরও ভালো লাগতো।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *