বরিশাল অফিস:: পটুয়াখালীর বাউফলের চরাঞ্চলে প্রায় ৩২ হেক্টর জমিতে শসা আবাদ হয়েছে। এ বছর উৎপাদনও ভালো হয়েছে। এসব শসা পাইকারদের হাত ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। ক্ষেতে প্রতি কেজি শসা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা দরে। আর উপজেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে শসা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়েছে অন্যান্য শাকসবজির দামও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের চর কালাইয়া, শৌলার চর, চর ফেডারেশন, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের রায়সাহেব, চর মিয়াজান, চর ব্যারেট, ধানদীর চর ও ধুলিয়া ইউনিয়নের চর বাসুদেব পাশাসহ উপজলোর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩২ হেক্টর জমিতে এ বছর শসার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া শসা চাষের অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে।
সরেজমিনে চর শৌলা এলাকায় দেখা যায়, পাইকারি বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে শসা তুলে বস্তায় ভরা হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব শসা কিনে নিয়ে যাবেন। ট্রাকে করে এসব শসা দেশের বিভিন্ন মোকামে চলে যাবে বলে জানান কৃষকরা।
মো. জাহাঙ্গীর মাঝি নামে এক কৃষক জানান, প্রায় দুই একর জমিতে শসা আবাদ করেছেন। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে। শসা আবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। রমজানের আগে তিনি প্রায় ৪০০ মণ শসা বিক্রি করেছেন। তখন ১৫-২০ টাকা দরে শসা বিক্রি করলেও রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা দরে। কয়েক দিনে প্রায় ১২০ মণ শসা বিক্রি করেছেন। ঢাকা বরিশাল থেকে বিভিন্ন পাইকার এসে শসা নিয়ে যান।
হাসেম মিয়া নামে আরেকজন জানান, রমজানের আগে দাম কম থাকলেও শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা ক্ষেত থেকে শসা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শসা বিক্রিতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
সম্প্রতি উপজেলার বড় কাঁচাবাজার কালাইয়া বন্দর ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শসা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে। যা রমজান শুরুর আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে শসার দাম দুই-তিনগুণ বেড়ে গেছে। আর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তাদের পাইকারি কেনা বেশি, তাই খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
মো. শুভ নামে এক বিক্রেতা জানান, রোজার আগে শসার পাইকারি দাম ছিল ১৫-২০ টাকা। রোজা শুরুর পর থেকে ৫০-৫৫ টাকা হয়ে গেছে। যার কারণে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, কেজিপ্রতি বিভিন্ন সবজি ও তরকারির দামও বেড়েছে। ৩০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, ৪০ টাকার করলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, ৩০ টাকার গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। তবে টমেটো ও মিষ্টি কুমড়ার দাম কিছুটা সহনীয় রয়েছে। ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো ও মিষ্টি কুমড়া। রাতারাতি সবজি ও তরকারির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এর জন্য প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে দায়ী করছেন তারা।
আনোয়ার হাওলাদার নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজার আগে শসার কেজি ছিল ২৫ টাকা। সেই শসা এখন ৮০ টাকা। শসা তো আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। এমনকি বাউফলেই প্রচুর শসা উৎপাদন হয়। তাহলে রাতারাতি দাম কীভাবে বাড়ল, কারা বাড়াল? প্রশাসনের বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছে। প্রশাসনের উচিত নিয়মিত বাজার মনিটারিং করা।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ‘অতিরিক্ত দামে সবজি বিক্রি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।