চন্দ্রদীপ ডেস্ক : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিরঙ্কুশ জয়ে সোমবার (১৭ মার্চ) নিন্দার ঝড় তুলেছিলেন পশ্চিমা নেতারা। পুতিনের প্রত্যাশিত এই জয়কে তারা পক্ষপাতমূলক ও অগণতান্ত্রিক বলে সমালোচনা করেছেন। তবে রুশ এই নেতার জয়কে স্বাগত জানিয়েছে চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা। সোমবার (১৮ মার্চ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
পুতিনের জয় নিয়ে এই বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দুই বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর সময় বিস্তৃত হওয়া ভূরাজনৈতিক ফাটলকে নির্দেশ করছে। শীতল যুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের গভীরতম সংকটের সূত্রপাত করেছে এই যুদ্ধ।
সোমবার ব্রাসেলসে পৌঁছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পুতিনের সমালোচক আলেক্সি নাভালনির সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং তার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সম্মত হন। এর আগে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলকে প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।
বৈঠকের শুরুতে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ‘রাশিয়ার নির্বাচন একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন ছিল।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে দেশটি। এই বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে পুতিনকে খোচা দিয়ে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান সেজর্ন বলেছেন, প্যারিস রাশিয়ার এই ‘বিশেষ নির্বাচনী অভিযান’ নজরে রেখেছে।
পুতিনকে অভিনন্দন জানালেন যারা
রাশিয়ার নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের মধ্যে নিন্দার চর্চা থাকলেও বিপরীত ঘটনা ঘটেছে বিশ্বের অন্য অংশে। পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন আক্রমণ করার ঠিক আগে, ২০২২ সালে রাশিয়ার সঙ্গে করা ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি প্রচারে দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে চীন।
সিনহুয়া নিউজ অনুসারে, শি তার শুভেচ্ছা বার্তায় পুতিনকে বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, আপনার নেতৃত্বে রাশিয়া অবশ্যই জাতীয় উন্নয়ন ও অবকাঠামোতে আরও বড় সাফল্য অর্জন করবে।’
শি’র বার্তার প্রতিধ্বনি করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ‘কার্যকরী এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ আরও শক্তিশালী করতে উন্মুখ ভারত। বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার লক্ষ্যে গঠিত উদীয়মান অর্থনীতির জোট ব্রিকস। ভারত, চীন এবং রাশিয়া এই জোটের সদস্য।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসময় রাশিয়ার সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের ইচ্ছার উপর আরও জোর দিয়েছেন তারা। কিম এবং রাইসির বিরুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ এনেছিল পশ্চিমারা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে আফ্রিকায় সমর্থন পেতে এবং এই অঞ্চল থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা। দেশটির কিছু সংবাদমাধ্যম বলছে, পুতিনের পুনঃনির্বাচন আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো, মালি এবং নাইজারে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাহেল অঞ্চলের এই তিনটি রাজ্য তাদের ঐতিহ্যবাহী ফরাসি এবং মার্কিন মিত্রদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে।
বুর্কিনা ফাসোর দৈনিক সংবাদমাধ্যম আজুরডহুই অ ফাসো বলেছে, আফ্রিকায় এই পুনঃনির্বাচনটি কোন ঘটনার মধ্যে পড়ে না বলে মনে হতে পারে। তবে সাহেল অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে এটি একটি বিশেষ অর্থ গ্রহণ করে। কেননা, রাশিয়ার একটি ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং প্রভাবের মাধ্যমে এই মহাদেশে ক্ষমতার একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরী করেছেন পুতিন।