পটুয়াখালী প্রতিনিধি : বাউফলে ক্রমেই বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও অন্যান্য অপরাধে ব্যবহার হচ্ছে এসব অবৈধ অস্ত্র। অহরহ ঘটছে অস্ত্র প্রদর্শন, ফাঁকা গুলি ও হতাহতের ঘটনা। এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি। ফলে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সম্প্রতি বড় ভাইয়ের অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে প্রতিবন্ধী ছোট ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় বাউফলে আবারো আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে অবৈধ অস্ত্র।
সূত্র জানায়, গত ৯ মার্চ উপজেলার সূর্যমণি গ্রামের বাবুল সওদাগরের বড় ছেলে পৌর শহরের নবারুণ সার্ভে অ্যান্ড পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র সজীব হোসেন (২২) তার কাছে থাকা অবৈধ পিস্তল নাড়াচাড়া করতে গিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া গুলিতে নিহত হন প্রতিবন্ধী ছোট ভাই সাব্বির হোসেন (১৩)। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত সজীবকে আটক করে এবং তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পিস্তলটি জব্দ করে।
এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং হত্যার অভিযোগে সজীবের নামে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র মামলার বাদী পুলিশ এবং হত্যা মামলার বাদী অভিযুক্ত সজীবের মা রাশেদা বেগম। দুই মামলায় জেলহাজতে পাঠানো হলে সজীব অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এর বেশি কিছু বলছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সজীব ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগান। তার সঙ্গে শহরের একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই সন্ত্রাসীরা সজীবকে অবৈধ অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহার করে আসছিলেন।
আরো পড়ুন : দুমকিতে চলাচলের পথে কাঁটাতারের বেড়া, এলাকাবাসীর মানববন্ধন
চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগা ইউনিয়নে নৌকার উঠান বৈঠক শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল খান। হামলার সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সন্ত্রাসীরা অবৈধ শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল। এ ঘটনায় রেজাউল গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
২০১৮ সালে বাউফল সদর ইউনিয়নে এক সভায় স্থানীয় এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের ছেলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য রায়হান শাকিবকে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল।
২০২১ সালে অনুষ্ঠিত নওমালা ইউপি নির্বাচনে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেখা গেছে। ওই সময় অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে একজন আহত হয়েছিলেন।
এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও উদ্ধার হয়নি কোনো অস্ত্র। অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও জনমনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক বিরোধের জের, স্থানীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও রাজনৈতিক নেতাদের সুনজরে থাকতেই ব্যবহার হচ্ছে ওই সব অবৈধ অস্ত্র।
জানা গেছে, ওয়ান শুটারগান, পাইপগান, এলজি, একে-২২, বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ, নাইন এমএম, পয়েন্ট টু টু রিভলবারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র এবং রাম দা, বাগি দা ও গিয়ার চাকু জাতীয় অস্ত্রও রয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে। বিভিন্ন সময় এসব অস্ত্র পরিবহনে ‘কিশোর অপরাধী চক্র এবং মোটরসাইকেলের চালকদের ব্যবহার করা হয়।
বাউফলের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম মিয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান কোনোভাবেই সন্তোষজনক বলা চলে না। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং মাদকের দাপটে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। শীঘ্রই আসছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। ওই নির্বাচনেও আধিপত্য বিস্তার করতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ স্থানীয় এমপি আ স ম ফিরোজ বলেন, বিগত বিশ-ত্রিশ বছরে এ রকম অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখিনি। একই সঙ্গে মাদকে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে বাউফল। এ কারণে যুব ও তরুণ সমাজ ধংসের পথে। জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোতাদের ধরতে পুলিশের ঊধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই তারা পদক্ষেপ নেবেন।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোনিত কুমার গায়েন বলেন, আমি যোগদান করার পর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কাজ শুরু করেছি। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।