শিরোনাম

বাংলাদেশ সরাসরি চীনের সঙ্গে লেনদেনে যাচ্ছে

Views: 52

চন্দ্রদীপ ডেস্ক : ডলারের বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতে এবার চীনের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নায় অ্যাকাউন্ট খুলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণে সুইফটের আদলে গড়ে ওঠা চায়নার সিআইপিএসে যুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ চীনের মাধ্যমে পরিশোধ করা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। যে কারণে দেশটির পাওনা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সোনালী ব্যাংকে একটি ‘স্ক্রো’ হিসাব খুলে সেখানে জমা করা হচ্ছে। রাশিয়ার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া এ প্রকল্পে চুক্তিমূল্যের ৯০ শতাংশ তথা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে দেশটি। প্রকল্পের মূল ঋণ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা ও দেশটির লেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধের চিন্তা করা হচ্ছে। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে রূপপুরের পাওনা সরাসরি রাশিয়াকে পরিশোধ না করে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে পরিশোধের জন্য একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অন্য যে কোনো দেশের লেনদেন নিষ্পত্তির বার্তা পাঠানোর একমাত্র উপায় ‘সুইফট’। ফলে এভাবে অর্থ পরিশোধের বিষয়টি সুইফট যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কায় ওই পরিশোধ করা হয়নি।

জানা গেছে, চীনের আমন্ত্রণে গত ৫ থেকে ১০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দেশটি সফর করে। এ সময় তারা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে অ্যাকাউন্ট খোলা ও লেনদেনের বার্তা প্রেরণের মাধ্যম দ্য ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে (সিআইপিএস) যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে জানান, বড় ব্যবসায়িক সহযোগী বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তবে চীনের মুদ্রা ইউয়ান অফিসিয়াল কারেন্সি হওয়ার পর সরাসরি আমদানি ও রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেউ ইউয়ানে এলসি নিষ্পত্তি করতে চাইলে করতে পারে। এখন দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি যেন নিষ্পত্তি করতে পারে, সে জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, ফ্রান্সসহ ১১টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। চীনের সঙ্গে লেনদেন নিষ্পত্তিতে বেশি ব্যবহার হয় এইচএসবিসি। অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ লেনদেন হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের মাধ্যমে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেরও বেশির ভাগ রক্ষিত আছে সেখানে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) বার্তা পাঠানোর একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে বড় অর্থনীতির কয়েকটি দেশ বেশ আগে থেকে ডলারের প্রভাব কমিয়ে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন চালুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাশিয়া ও চীন। সম্প্রতি ভারতও নিজেদের মুদ্রা শক্তিশালী করতে নানা পন্থা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশকে রাশিয়া তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব লেনদেনের বার্তা প্রেরণ ব্যবস্থা ফাইন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেমে (এসপিএফসি) যুক্ত করার জন্য ২০১৬ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে চীনের মুদ্রায় এলসি খোলার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার গত বছরের জুলাই থেকে ভারতের সঙ্গে সরাসরি রুপিতে লেনদেন নিষ্পত্তির একটি ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *