শিরোনাম

পটুয়াখালীর বাউফলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, বিপাকে যাত্রীরা 

Views: 64

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে ১৫ দিন ধরে ঢাকাগামী ও ঢাকা থেকে বাউফলগামী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন লঞ্চ মালিকেরা। এতে বাউফল ও দশমিনা উপজেলার সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী, ঘাট ইজারাদার ও শ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মব্যস্ত ঘাটগুলোতে শুনশান নিরবতা বিরাজ করছেন। নেই কোনো হাক-ডাক। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকেরা। অসল সময় কাটাচ্ছেন ইজারাদারেরা।

লঞ্চঘাট ইজারাদার ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কালাইয়া, নিমদী, নুরাইপুর ও ধুলিয়া লঞ্চঘাট থেকে প্রায় ৫০ বছর ধরে ঢাকার সঙ্গে নৌপথে লঞ্চ চলাচল করে। বাউফল এবং দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার যাত্রী যাতায়াত ও ব্যবসায়ীরা কম খরচে নিরাপদে পণ্য পরিবহন করে থাকেন। ঘাটগুলোতে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংখ্যা কিছু কমেছে। তারপরেও ৩০০ থেকে ৩৫০ যাত্রী নিয়মিত যাতায়াত করেন।

তবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেন লঞ্চ মালিকেরা। টানা ৭ দিন বন্ধ থাকে লঞ্চ। এরপর ১৬ দিন চলাচল করার পর আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৮ মার্চ কালাইয়া ঘাট থেকে এমভি বন্ধন-৫ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে আর কোনো লঞ্চ ঢাকা থেকে আসেনি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

মো. আনোয়ার নামে এক যাত্রী বলেন, আমার বাবা অসুস্থ। ঢাকাতে নিয়মিত চিকিৎসকের চেকআপে নিতে হয়। লঞ্চ বন্ধ থাকায় খুব ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। অ্যাম্বুলেন্সে নিতে ব্যয় বেশি। দুঘর্টনার ঝুঁকি আছেই।

আরো পড়ুন : বাউফলে তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

সোহরাব নামে আরেক যাত্রী বলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে লঞ্চে ঢাকা যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ। লঞ্চ বন্ধ থাকায় গাড়িতে যেতে হচ্ছে। এতে ব্যয়ও বাড়ছে। জার্নি করতেও কষ্ট হচ্ছে।

ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের ইদযাত্রা নিরাপদ সহজ ও সুন্দর করতে শীঘ্রই লঞ্চ চালুর দাবি যাত্রীদের। ঢাকা থেকে মুদি, পোশাক, ইলেকট্রনিকস, ফলসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হত।
একই সঙ্গে বাউফল থেকে মাছসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য কম খরচে ঢাকায় পরিবহন করা হত। লঞ্চ বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কালাইয়া বন্দরের পোশাক ব্যবসায়ী মো. সুমন বলেন, সামনে ঈদ। ইতোমধ্যে ঈদের বেচাকেনা বাড়ছে। ঢাকা থেকে লঞ্চে পোশাক আনা সহজ ও পরিবহন খরচ কম। লঞ্চ বন্ধ থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

পৌর শহরের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী শংকর সাহা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা থেকে লঞ্চে মালামাল পরিবহন করে আসছি। ঢাকা থেকে লঞ্চে তুলে দিলে পরের দিন দোকানে পৌঁছে দেয় ঘাট শ্রমিকেরা। লঞ্চ বন্ধ থাকায় গাড়িতে মালামাল আনতে হয়। অনকে সময় গাড়ির ঝাঁকুনিতে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।

লঞ্চ বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকেরা অর্থ সংকটে মানবতর জীবনযাপন করছেন তারা।

কালাইয়া ঘাটের শ্রমিক সরদার মো. কালু বলেন, লঞ্চ বন্ধ, তাই কাজও বন্ধ। এতে আমার সংসার চলাতে কষ্ট হচ্ছে।

কালাইয়া লঞ্চঘাট ইজারাদার মো. শামিম হোসেন বলেন, লঞ্চ বন্ধ থাকায় ঘাট স্টাফ নিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার লোকসান হচ্ছে।

নিমদী, নুরাইপুর ও ধুলিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। এসব ঘাটের ইজারাদারেরা বলেন, বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা লাভ করে নিয়েছেন লঞ্চ মালিকেরা। এখন যাত্রী কম থাকায় তারা লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা হতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রয় শুরু

এই রুটে চলাচলকারী এমভি ইগল লঞ্চের সুপারভাইজার মো. বাদশা মিয়া বলেন, ঈগল-৮ যান্ত্রিক ত্রুটি ও ঈগল-৫ সংস্কার কাজ চলায় বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষ হলেই লাইনে ফিরবে।

আর এমভি বন্ধন-৫ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সজল ও এমভি সাব্বির-২ লঞ্চের সুপারভাইজার সুমন বলেন, যাত্রী কম। যে যাত্রী হয় তাতে মালিকের লস হয়। তাই লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে ঈদের আগে চালু হবে। কিন্তু ঠিক কবে চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না তারা।

পটুয়াখালী নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে এটা সত্য, কেন বন্ধ আছে সেটা আমি জানি না, এ ব্যাপারে আমরা আফিসকে জানিয়েছি। লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *