শিরোনাম

তিন শিশুর মৃত্যু : অ্যানেসথেসিয়ার ওষুধ পরিবর্তন করার নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের

Views: 58

চন্দ্রদীপ ডেস্ক : ভেজাল অ্যানেসথেসিয়া ওষুধে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তিন শিশুর কানে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট বসানোর সময় তাদের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছিল। সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের যে অ্যানেসথেসিয়া ওষুধ হিসেবে ‘হ্যালোথেন’ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ওষুধে হ্যালোথেনের উপাদানই ছিল না। অর্থাৎ এটা ভেজাল। এই রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এসেছে গতকাল। এ কারণে গতকাল জরুরি মিটিংয়ে বসে স্বাস্থ্য প্রশাসন। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে ব্যবহূত ওষুধ পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ‘ইনহেলেশনাল অ্যানেস্থেটিক’ হিসেবে ‘হ্যালোথেন’ এর পরিবর্তে ‘আইসোফ্লুরেন বা সেভোফ্লুরেন’ ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে অ্যানেসথেসিয়জনিত মৃত্যু ও এর অপপ্রয়োগ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

তবে এর আগে সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে অপারেশন করার সময় অনেক রোগী মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভেজাল হ্যালোথেনের কারণে। এটা গত বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে হ্যালোফেন উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে এসিআই ওষুধ কোম্পানি এই ওষুধটি তৈরি করতো, যার নাম ছিল হ্যালোসিন। তারাও এটার উৎপাদন বন্ধ করেছে এক বছর ধরে। তবে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে আসে এই হ্যালোথেন। যেটা ভেজাল ও নকল। এ কারণে খৎনা করাতে গিয়েও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হ্যালোথেন ওষুধটি রোগীকে অজ্ঞান করতে ব্যবহার করা হয়। আইসোফ্লুরেন ও সেভোফ্লুরেনও রোগীকে অজ্ঞান করতে ব্যবহার হয়। এগুলো আলাদা ওষুধ হলেও মূল কাজ রোগীকে অজ্ঞান করা। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ওষুধগুলো শরীরে প্রবেশ করালে রোগী অজ্ঞান হয়। সম্প্রতি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমদ এবং মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে আহনাফ তাহমীদ আলম আয়হাম নামে দুই শিশুকে খৎনা করানোর জন্য অজ্ঞান করার পর ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়। ওই দুই শিশুর মৃত্যুর পর দেশে সঠিক পদ্ধতিতে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্ন সামনে আসে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অবশেষে স্বাস্থ্য বিভাগের টনক নড়েছে। যারা ব্যবহার করছেন তারা এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। স্বজনহারা পরিবারগুলোর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে অর্ধহারা, অনাহারে জীবন পার করছেন। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে। এছাড়া দেখভাল করার অনেকে আছেন। তারপরও ভেজাল হ্যালোথেন ব্যবহারে এতোগুলো মানুষ মারা গেল। খৎনা করাতে গিয়ে মারা গেছে। এর কারণ এই ভেজাল হ্যালোথেন। যেটা গতকাল প্রমাণিত হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারাদেশে টিম পাঠিয়ে তদন্ত করে দেখেছে যে, সার্জন ঠিক আছে, অজ্ঞানকারী ডাক্তার ঠিক আছে ও অপারেশন থিয়েটার ঠিক আছে। তাহলে রোগী মারা গেল কেন? কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা।

না। বিশ্বব্যাপী হ্যালোথেন ৮০ থেকে ৯০ বছর ধরে ব্যবহার হয়েছে। গত এক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী এটি আর ব্যবহার হয় না। এখন নতুন ওষুধ হলো আইসোফ্লুরেন। আমাদের দেশে যে হেলোসিন তৈরি হয়, সেটার কাঁচামাল ভারত থেকে আসতো। গত এক বছর ধরে আর আসে না। এদিকে নতুন ওষুধ আইসোফ্লুরেন ব্যবহার করার মেশিন আলাদা। নতুন ওষুধ ব্যবহার করতে হলে মেশিনের কিছু পার্টস পরিবর্তন করতে হয়। অনেকে তা করে না। আইসোফ্লুরেন ব্যবহার করার মেশিনের নাম হলো ভ্যাপোরাইজার। এটার মূল্য দুই লাখ টাকার বেশি। এ কারণে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক এটি কেনে না। বরং ভেজাল হ্যালোথেন ব্যবহার করছে। এ কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। প্রতিটি আসল হ্যালোথেন এর দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আর আইসোফ্লুরেন এর দাম ৬০০ টাকা।

সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্ট সম্প্রতি লিখিতভাবে জানিয়েছে, অ্যানেসথেসিয়া ওষুধ ব্যবহার নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। এ জন্য তারা সরকারের কাছে এর ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট আদেশ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। যদি হ্যালোথেন ব্যবহার করেন, তাহলে অরিজিনাল হ্যালোথেন ব্যবহার করতে হবে। তবে হ্যালোথেন কিংবা আইসোফ্লুরেন যেটিই ব্যবহার হবে, অবশ্যই তাকে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন থাকতে হবে। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে বিএসএমএমইউয়ে জরুরি মিটিং হয়। এতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অ্যানেসথেসিয়ার ওষুধ হিসেবে আইসোফ্লুরেন ব্যবহার করতে হবে। ডিগ্রীধারী কোনো ডাক্তার ছাড়া কেউ অ্যানেসথেসিয়া দিতে পারবে না।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *