পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ৮ লাখ মানুষ। পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর বগা পয়েন্টে একটি সেতুর অভাবে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষ দেশের সার্বিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফেরি ও ট্রলারে পারাপারে সময় নষ্টের পাশাপাশি নানামুখী ভোগান্তি পোহাচ্ছে বিভাগীয় শহর ও রাজধানী গামী যাত্রীরা। তিন উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন লোহালিয়া নদীর ওপরে বগা সেতু নির্মাণ হবে। রাজধানী ঢাকা যেতে বগা ছাড়া অন্যকোথাও ফেরি পারাপার হতে হয় না।
এ অঞ্চলের ভুক্তভোগী জনগণ ও সংশ্লিষ্টরা জানায়, পটুয়াখালী জেলা শহরের সাথে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলাকে বিভক্ত করেছে লোহালিয়া নদী। প্রতিদিন এই নদীর বাউফল উপজেলার বগা পয়েন্টের ফেরি পারাপার হয়ে জেলা, বিভাগ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি ঘাটে আটকে থেকে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
অন্যদিকে ট্রলারে করে এই নদী পাড় হতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ।
আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোর চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার
জেলার ভিতর সবচেয়ে বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বাউফল। এই উপজেলাতেই রয়েছে দেশের প্রাচীণতম বাণিজ্যিক এলাকা কালাইয়া ও কালিশুরি বন্দর। এই বাণিজ্যিক এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে যায় শতশত ভাড়ি ও মাঝাড়ি আকৃতির ট্রাক। এছাড়াও বাউফল-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে বগা ফেরি হয়ে রাজধানীতে চলাচল করে দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার বহু যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন।
ঢাকা থেকে বাউফল আসা যাত্রী আরিফুর জানান, ঢাকা থেকে বাউফল আসতে সময লেগেছে ৪ঘন্টা অথচ ফেরি ঘাটে এসে ১ঘণ্টা বসে আছি এটা খুবই দুঃখজনক।
অপর যাত্রী বলেন, সেতু না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ।
পরিবহন চালক আব্দুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছি না আমরা। বগা ফেরিতে এসে ১/দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় এই দূর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে চাই।
এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ফেরি কারণে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়ে ইমার্জেন্সি রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক সময় ফেরিতে দেড়ির কারণে রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে বলেও জানান তারা।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, সেতু না থাকায় রোগীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। ফেরিতে দেড়ি হওয়ায় রোগীদের চিকিৎসা পেতে দেড়ি হয় এতে মৃত্যু ঝুকি বেড়ে যায়।
বাউফলের ৮ বারের এমপি দীর্ঘ ৪০ বছর বিভিন্ন সময়ে জনগণকে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে তা আজও বাস্তবায়ন না করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ।
আরো পড়ুন : বাউফলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ
বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, বগা সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চল হবে শিল্পাঞ্চল এবং এই অঞ্চলের কৃষির অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই অঞ্চলের মানুষ। বদলাবে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান, কমবে বেকারত্ব। প্রধানমন্ত্রী বগা সেতু নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আ স ম ফিরোজ বলেন, সেতু নির্মানে বিলম্ব হওয়ার বিষয় সরকারের কোনো হাত নেই। চীনা সরকার বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করতেছে। তারা ইতিমধ্যে সেতুর সম্ভব্যতা নিশ্চিত হয়েছে। তাদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সেতুটি বাস্তবায়ন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বগা ফেরি ঘাটে ৯ম চীন-মৈত্রী সেতু নির্মিত হবে। চীনের প্রতিনিধি দল গত বছর সেতু সম্ভব্য স্থান পরিদর্শন করেছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি সাক্ষরের পড়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এবিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে কতদিনের মধ্যে সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা রয়েছে তা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।