খোকন আহম্মেদ হীরা,বরিশাল :: আসন্ন ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলার নয়টি উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে। এসব উপজেলার সম্ভ্রাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
এছাড়া প্রতিদিনই প্রার্থীদের রয়েছে নির্বাচনী এলাকায় ইফতার আয়োজন। ইতোমধ্যে গোপনে ভোটারদের মাঝে ঈদ উপহারও পৌঁছে দিয়েছেন অসংখ্য প্রার্থীরা। ফলে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এবার আসন্ন ঈদ-উল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের আনন্দের সাথে বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে। দুটি সর্ববৃহত উৎসব নির্বাচনের আগে হওয়ায় এবার প্রার্থীদেরও খরচ বেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়া অন্যকোন দলের প্রার্থীদের খবর পাওয়া যায়নি।
এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মিনার-সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী ঈদের জন্য প্রস্তুত
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ও উপজেলার বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতৃত্বস্থানীয় একাধিক নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন থেকে উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ থাকবেনা বলে ঘোষণা করা হলেও বাস্তবের সাথে এ কথার কোন মিল নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্ব-স্ব এলাকার সংসদ সদস্যদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। এছাড়াও একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। যেকারণে এ নির্বাচনও শেষপর্যন্ত কতোখানি সুষ্ঠু হবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে গণসংযোগ করে আসছেন বরিশাল
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী হাওলাদার ও স্বেচ্ছাসেবী এস.আর সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক।
প্রথমধাপের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান মাসুদ ও যুবলীগের সহসস্পাদক রাজিব আহমেদ তালুকদার।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জনতার প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক মেধাবী ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ আদনান আলম খান বাবু, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার খালেদ হোসেন স্বপন এবং ভাইস চেয়ারম্যান ফরজানা বিনতে ওহাব। ওই উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক গণসংযোগ করে আসছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মৌরিন আক্তার আশা।
এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মিনার-সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থী ঈদের জন্য প্রস্তুত
উজিরপুর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম জামাল হোসেন,স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুখেন্দ শেখর বৈদ্য, শোলক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী হুমায়ুন কবির, জাসদ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ
বাদল প্রচার-প্রচারনায় রয়েছেন। বানারীপাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ গোলাম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মামুন-উর রশিদ স্বপন তালুকদার, সহ-সভাপতি জিয়াউল হক মিন্টু এবং জাসদ নেতা সাজ্জাদ হোসেন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে আগৈলঝাড়া উপজেলায় পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অতিসম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ছোট ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার পর এতোদিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করা প্রার্থীরা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। তবে শেষপর্যন্ত ওই উপজেলায় সাবেক এক চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
বরিশাল গৌরনদী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন লাগিয়ে ১০ জন প্রার্থী দোয়া ও সমর্থন চেয়ে আসছিলেন। অতিসম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার পর আটজন প্রার্থী নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। তবে শেষপর্যন্ত প্রতিদ্বন্ধীতা করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী এবং পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মনির হোসেন মিয়া।
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে মুলাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে প্রচার- প্রচারনায় মাঠে নেমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিকসম্পাদক মোঃ জহির উদ্দীন খসরু। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে উপজেলাজুড়ে পরিচিত জহির উদ্দীন খসরুর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এবার প্রকাশ্যে গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, বরিশাল-৩ (মুলাদী ও বাবুগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মুলাদীতে জাতীয় পার্টির কোনো নেতা নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। যেকারণে জাপার নেতাকর্মীরা জহির উদ্দীন খসরুর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগে নেমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ইউসুফ আলী, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
হিজলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান (সদ্য প্রয়াত) মোঃ বেলায়েত হোসেন ঢালীর একমাত্র ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম রাজু ঢালী। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ দিপু সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহজাহান তালুকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম স্বপন চৌধুরী এবং হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
তৌফিকুর রহমান সিকদার প্রার্থী হতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক সম্ভ্রাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেন, সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের শতভাগ প্রতিশ্রুতি পেলে প্রতিটি উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুর্দীনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা প্রার্থী হবেন।
কোনধরনের প্রভাব থাকবেনা জানিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, যেহেতু এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক থাকছেনা, তাই প্রার্থী নিয়েও কোন বক্তব্য নেই। শুধু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। জনগন যাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করবেন, তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে, নির্বাচন নিয়ে যেন নিজেদের মধ্যে কোনধরনের সংঘাতের ঘটনা না ঘটে।