চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : আপনজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ির পথে নগরবাসীর রাজধানী ছাড়ার ঢল নেমেছে। সড়ক-নৌ ও রেলপথ সবখানের বাড়িমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রী সংকটে ভোগা সদরঘাটের লঞ্চগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই থাকছে না। গার্মেন্ট ছুটি হওয়ায় সড়কপথে গাড়ির চাপও অনেক বেড়েছে। রেলেও রয়েছে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ। যদিও দুর্ভোগ উপেক্ষা করে আপন নীড়ে ছুটে চলা মানুষের মনে বইছে খুশির বন্যা। আপনজনদের সান্নিধ্য তাদের পথে ভোগান্তির সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।
সড়ক, রেল ও নৌপথে ঈদযাত্রার ভোগান্তি আজ আরও বেশি হতে পারে বলে শঙ্কা করা হয়েছে। যদিও হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে তৎপর রয়েছে। তবে একসঙ্গে অনেক বেশি যাত্রী সড়কে নেমে পড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় মাঠে নেমেছে কমিউনিটি পুলিশ, রোবার স্কাউট, বিএনসিসি। তাদের সমন্বিত এই তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ঈদযাত্রার দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব।
পদ্মা সেতুমুখো সড়কে স্বস্তিতে যানবাহন চলাচল : ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়া যানবাহনগুলো তেমন ভোগান্তি ছাড়াই নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনে মোটরসাইকেলের দীর্ঘসারি তৈরি হয়েছিল। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পরে পর্যায়ক্রমে যানবাহনের ভিড় বাড়ে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায়। এরপর ধীরগতিতে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করেছে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৭টি টোল বুথে যানবাহনের টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে মোটরসাইকেলের বাড়তি চাপ থাকায় আলাদা লেন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে ও ওভার ট্রাকিং বন্ধে স্পিডগানের মাধ্যমে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে হাইওয়ে পুলিশ।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার ম্যানেজার আহমেদ হক জানান, যেহেতু সরকারি-বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গার্মেন্ট ছুটি হয়েছে। এজন্য সড়কে বিড়ম্বনা একটু হবে। তবে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পরিবহণগুলো পদ্মা সেতু অতিক্রম করে দ্রুতগতিতে। আজ সকাল থেকেই যানবাহনের বাড়তি চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এবার ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি নিরসনে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের।
লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় : সোমবার সদরঘাটের ঢাকা নদীবন্দরে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। সেই সঙ্গে প্রায় লঞ্চেই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে। লঞ্চ টার্মিনাল, পন্টুনেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লঞ্চগুলোতে ছাদ ছাড়াও ডেকের বিভিন্ন স্থানেও যাত্রীরা অবস্থান নিয়েছে। অধিকাংশ কেবিন অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বরিশালগামী লঞ্চগুলোতে ডেক যাত্রীদের ৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ডাবল কেবিন ৩ হাজার টাকা ও ভিআইপি কেবিন ১ হাজার ২০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া চরফ্যাশন, বেতুয়া, হাতিয়া, আমতলী, বরগুনা ও ভোলা রুটেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৫টি লঞ্চ বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। রাত ১২টা পর্যন্ত ১০৫টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এবার লঞ্চগুলোতে সুশৃঙ্খল পরিবেশে যাত্রীরা আরোহণ করেছে। ঘাটে যাত্রীদের নিয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত টানাহেঁচড়া চোখে পড়েনি।