সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়ালা নিউজ এজেন্সিসহ বিভিন্ন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তও হামলার ব্যাপারে জানতেন না।
ঈদ উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার নিজেদের তিন ছেলে-মেয়েসহ গাজার আল শাতি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন ইসমাঈল হানিয়ার তিন ছেলে আমির হানিয়া, মোহাম্মদ হানিয়া এবং হাজেম হানিয়া। সে সময় শরণার্থী শিবিরে হানিয়ার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের বহনকারী গাড়ির ওপর বোমা ফেলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী; এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সবাই।
হামাস প্রধানের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করলেও হামলার আগে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাবে এ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল কি না— সে সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তর এখন পর্যন্ত দেননি আইডিএফের কোনো মুখপাত্র। তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হানিয়ের পরিবারের সদস্য— এই পরিচয়ের কারণে তাদেরকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়নি, বরং তারা হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট— এ কারণে হামলা চালানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও এ প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
প্রসঙ্গত,গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার জবাবে সেই দিন থেকেই উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত প্রায় ৭ মাসের অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৭৫ হাজার জন। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
এর আগে ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা। তাতে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরেও নিয়ে গিয়েছিল হামাস।
সেই জিম্মিদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ১৩২ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০৮ জন এখনও রয়েছেন হামাসের কব্জায়। তাদের মুক্তির জন্য গাজায় ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি আহ্বানে আলোচনা চলছে।
তবে যুদ্ধবিরতির জন্য গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করাসহ যেসব শর্ত হামাস দিয়েছে, সেসব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা। ফলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে খানিকটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যেই।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বুধবারের এই হামলার পর গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কার্যত আরও ঝুলে গেলো।
সূত্র : রয়টার্স, আল আরাবিয়া