চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরিতে আইপিএলে নিজেদের গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। জবাবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও কম যায়নি।
দীনেশ কার্তিকের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে রানের পাহাড়ে চড়েছে তারাও। দুই দল মিলে গড়েছে বেশ কয়েকটি রেকর্ড।শেষ পর্যন্ত ব্লকবাস্টার ম্যাচটিতে জয় পেয়েছে হায়দরাবাদ।
বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠ এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আজ ২৫ রানে জিতেছে হায়দরাবাদ।
আগে ব্যাট করে তারা ৩ উইকেটে ২৮৭ রানের অবিশ্বাস্য সংগ্রহ গড়ে। যা স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
এর আগে এশিয়ান গেমসে ৩ উইকেটে ৩১৪ রান তুলেছিল নেপাল। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে হায়দরাবাদের রানই সর্বোচ্চ।
আইপিএলের ইতিহাসে শীর্ষ পাঁচ দলীয় সংগ্রহের ৪টিই হয়েছে এবারের আসরে। এর মধ্যে আজকেই হয়েছে দুটি রেকর্ড। হায়দরাবাদের ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্য তাড়ায় ৭ উইকেটে ২৬২ রান তুলতে পারে বেঙ্গালুরু। আইপিএলে লক্ষ্য তাড়ায় যা কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
দুই দল মিলে তুলেছে ৫৪৯ রান, যা আইপিএল তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতেই সর্বোচ্চ। তাছাড়া আইপিএলে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছক্কা (৩৮টি) ও চারের (৪৩) রেকর্ডও হয়েছে আজ। চার ও ছক্কা হয়েছে মোট ৮১টি। এর আগে ২০২৩ সালে সেঞ্চুরিয়নে সমান বাউন্ডারি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও উইন্ডিজ ম্যাচে।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার বিরাট কোহলি ও ফাফ ডু প্লেসির ব্যাটে ঝোড়ো শুরু পায় বেঙ্গালুরু। দুজনের জুটিতে আসে ৮০ রান। ২০ বলে ৪২ রান করে কোহলি বোল্ড হয়ে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। সেই ধাক্কার পর দলীয় ১২২ রান তুলতেই আরও ৪ উইকেট হারায় বেঙ্গালুরু।
ধুঁকতে থাকা বেঙ্গালুরু দশম ওভারে ম্যাচ থেকে একপ্রকার ছিটকেই যায়। কিন্তু এরপরই বেঙ্গালুরুর আশার আলো হয়ে আসেন কার্তিক। প্রায় একাই দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন তিনি। মাত্র ২৩ বলে তিনি তুলে নেন ফিফটি। ১১ বলে ১৯ রান করে তাকে প্রথমে সঙ্গ দেন মহিপাল লোমরোর।
কার্তিক যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে ম্যাচ বেঙ্গালুরুর দিকেই হেলে পড়তে শুরু করেছিল এক পর্যায়ে। কিন্তু লক্ষ্যটা অনেক বেশি হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। শেষ ১২ বলে ৫৮ রান দরকার ছিল তাদের। ১৯তম ওভারের প্রথম ৪ বলে ১৪ রান তুলে ফেলেন কার্তিক। কিন্তু পঞ্চম বলে কাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন তিনি।
মাত্র ৩৫ বলে ৮৩ রান করেন কার্তিক। যা ৫টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজানো। এমনকি শেষ ওভারে অনুজ রাউত ৪ চারে ২০ রান তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু জয় থেকে ২৫ রান পেছনে রয়ে যায় তারা।
এর আগে শুরু থেকেই বেঙ্গালুরুর বোলারদের তুলোধুনো করে হায়দরাবাদের ওপেনাররা। ট্রাভিস হেড তো ছিলেন একদমই বিধ্বংসী রূপে। অভিষেক শর্মাকে সঙ্গে করে ১০৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তিনি।
অভিষেক ৩৪ রানে ফিরে গেলেও হেড তাণ্ডব চালাতেই থাকেন। মাত্র ৩৯ বলে স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। যা আইপিএল ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম। সেঞ্চুরির পর অবশ্য এই অজি ওপেনার অবশ্য মাত্র দুই বলই টেকেন। তবে বাকি ব্যাটারদের জন্য বিধ্বংসী শুরুর সুর বেঁধে দিয়েছেন। ৪১ বলে ৯ চার ও ৮ ছক্কায় ১০২ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
হায়দরাবাদের ঝড় তখনো থামার নাম নেই। হেডের জায়গায় বসে বেঙ্গালুরুর বোলারদের কচুকাটা করতে থাকেন হাইনরিখ ক্লাসেন। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে সেদিন ভয়ানক রূপে থাকা এই প্রোটিয়া ব্যাটার আজও ছক্কার বৃষ্টি বইয়ে দেন। খেলেন ৩১ বলে ২ চার ও ৭ ছক্কায় ৬৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।
ক্লাসেন যখন আউট হন তখনো ইনিংস শেষ হতে তিন ওভার বাকি ছিল। সেই তিন ওভারে ৫৬ রান তোলেন এইডেন মারক্রাম ও আব্দুল সামাদ। ১৭ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় মারক্রাম ৩২ ও সামাদ ১০ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
সব মিলিয়ে এই ইনিংসে ২২টি ছক্কা মেরেছেন হায়দরাবাদের ব্যাটাররা। যা টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। এর আগে একই মাঠে পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ২১টি ছক্কা মেরেছিল বেঙ্গালুরু।
প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯ দিন আগে গড়া নিজেদের রেকর্ড ভাঙে হায়দরাবাদ। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ২৭৭ রান করে আইপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়েছিল তারা। ভেঙেছিল ১১ বছর ধরে টিকে থাকা বেঙ্গালুরুর রেকর্ড। নিজেদের গড়া রেকর্ড আজ ভাঙে হায়দরাবাদ।
বল হাতে বেঙ্গালুরুর চারজন বোলার খরচ করেছেন ৫০-এর অধিক রান। এককথায় আজ বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠ ছিল বোলারদের বধ্যভূমি। হায়দরাবাদের বোলারদের ওপর ঝড় বয়ে গেছে সমানতালে। তবে ভুবনেশ্বর কুমার ৬০ রান খরচ করলেও পেয়েছেন ৪ উইকেট।
এই জয়ে ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট হলো হায়দরাবাদের। যা তাদের তুলে আনলো পয়েন্ট টেবিলের চারে। দুই ও তিনে থাকা কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংসেরও পয়েন্টও ৮। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে আছে তারা। আর কলকাতা ম্যাচ খেলেছে ৫টি। শীর্ষে থাকা রাজস্থান রয়্যালসের সংগ্রহ ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট।