শিরোনাম

বরিশালে ভোজন বিলাসীদের রসনার তৃপ্তি গৌরনদীর দই

Views: 59

বরিশাল অফিস :: বরিশালের গৌরনদীর দই ২০০ বছর ধরে নানা উৎসবে ভোজন বিলাসীদের রসনার তৃপ্তি মিটিয়ে আসছে। বৃটিশ আমল থেকে গৌরনদী থানার ডাওরি ঘোষের হাতে সুখ্যাতি পায় দইসহ বিভিন্ন মিষ্টি, যা বংশপরম্পরায় এখনো টিকে আছে। বিদেশেও গড়ে উঠেছে গৌরনদীর দইয়ের দোকান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা খান সামসুল হক জানান, ব্রিটিশ কর্তারা গৌরনদীর দই, মিষ্টি, ঘি ও মাখন খুব পছন্দ করতেন। জমিদাররা অতিথিদের এসব সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। অভিজাতদের মাধ্যমেই গৌরনদীর দই ও মিষ্টি দেশ-বিদেশে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

গৌরনদীর প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টি প্রস্তুতকারক জীবন ঘোষের গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার-এর কর্মচারী রানা ঘোষ ১৯৯০ সালে ডিভি লটারি জিতে আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে দোকান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে রানা গৌরনদীর দই, মিষ্টি, ঘি ও মাখনের সুখ্যাতি আমেরিকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন খোন্দকার বলেন, দইয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ এমন ছিল; কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলেও তা থেকে যেত। সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে গৌরনদী থেকে এসব পণ্য কলকাতা, করাচি ও রেঙ্গুন পর্যন্ত সরবরাহ করা হতো। সেই থেকে এখনো বিয়ে, জন্মদিন কিংবা মেজবানের খাবারে অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে গৌরনদীর দই।

শচীন ঘোষের ছেলে গৌরনদী বন্দরের গৌরনিতাই মিষ্টান্ন ভান্ডার-এর কর্ণধার গৌরদাস ঘোষ বলেন, গৌরনদীর দইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য সহজে পরিবহনযোগ্য এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৭-৮ দিন ভালো থাকে। একইভাবে শুকনো মিষ্টি ১৫ দিন, মাখন দু-একদিন এবং ঘি এক বছরেও নষ্ট হয় না। দই-মিষ্টি তৈরির উপকরণ দুধ-চিনি; জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। কষ্ট হলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছি।

ননী ঘোষের ছেলে শ্যামল ঘোষ বলেন,পূর্বপুরুষের গড়া মানের সঙ্গে আপস করিনি। তবে দুর্মূল্যের বাজারে দিন দিন ভালো জিনিস তৈরি কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রস্তুত প্রণালী: প্রথমে সংগ্রহকৃত গরুর দুধ বড় কড়াইতে নিয়ে ভালোভাবে মাটির চুলাতে রেখে জ্বাল দেওয়া হয়। এরপর তা ঠান্ডা করা হয়। কড়াইয়ের ভেতর থেকে বাঁশের চাক দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাখন তুলে ফেলা হয়। এরপর কড়াইয়ে দুধের যে অংশ থাকে তার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে আবারো ভালোভাবে গরম করা হয়। এবার মিশ্রণের রং কিছুটা লালচে আকার ধারণ করলে তা নামিয়ে ফেলা হয়। এরপর ওই মিশ্রণ মাটিতে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন আকৃতির (১ কেজি থেকে ৬ কেজি) মাটির হাঁড়িতে ঢালা হয়। এভাবে দই পাতা হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় চাণক।

এভাবে হাঁড়িতে পেতে রাখা দই এভাবে চারপাশে কচুরিপানা দিয়ে তার ওপর ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা রাখার পর তা অকেটা জমাট ও কিছুটা শক্ত হয়ে আসে। এরপর শুরু হয় তা বিক্রি ও বাজারজাতকরণের কাজ। এই দই আবহাওয়া ও তাপমাত্রা ভেদে ৬ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *