পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: তীব্র গরম উপেক্ষা করে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আনন্দ উল্লাসে মেতে হাজার পর্যটক। ৪৩ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাতেও নোনা জলে জলকেলিতে প্রশান্তি খোঁজ করছেন তারা। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে স্থানীয় শরবত ও কোমল পানিয়র দোকানগুলোতে।
নাগরিক কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে প্রতি সপ্তাহের ন্যায় শুক্রবার ও শনিবার পর্যটন নগরী পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় হাজার পর্যটক ভ্রমণে এসেছে। সকাল থেকে তীব্র গরম উপেক্ষা করে সৈকতের তপ্ত বালিতে প্রিয়জনের সঙ্গে ছাতা হাতে কেউবা আবার মাথায় ক্যাপ-গামছা পেঁচিয়ে হেঁটে বেরাচ্ছেন। কেউবা আবার বেঞ্চিতে বসে শান্ত সমুদ্রের বিশালতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। তীব্র গরমের কারণে অনেকে হোটেল রুমে অবস্থান করছেন। ফলে ট্যুর গাইডগুলো অনেকটাই অলস সময় পার করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।
আরো পড়ুন : গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে এক তরুণীর অনশন
ফরিদপুর থেকে বন্ধুদের নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা ফয়সাল জানান, প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেই ঘুরতে আসতে হয়েছে কেননা ইদ ছাড়া সব বন্ধুরা এক হওয়া হয় না। ঈদের পরে সবাই এক সঙ্গে ঘুরতে এসেছি আর এই গরমে সমুদ্রে সময় কাটাতে ভালোই লাগছে।
মাগুরা থেকে ঘুরতে আসা মাহাতাব হোসাইন বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে এই প্রথমবার কুয়াকাটা এসেছি। বছরের শুরুতেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম কিন্তু এত গরমের মধ্য আসতে হবে বুঝতে পারিনি। সমুদ্র সৈকতে এসে বাচ্চারা অনেক খুশি কিন্তু এত গরমে বেশি সময় বিচে থাকা অসম্ভব।’
তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরমে সবেচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাতের দোকানদার, অটোরিকশাচালক, সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরাও পড়েছেন বিপাকে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার ভ্যানচালক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘এই মৌসুমে যাত্রীর অনেক চাপ এবং ইনকামও বেশি কিন্তু সারাদিন রোদে গরমে যাত্রী আনা-নেওয়ায় খুব কষ্ট হয়।’
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ডাব ব্যবসায়ী সিদ্দিক খান বলেন, ‘প্রচন্ড গরমের মধ্যে আমাদের কুয়াকাটায় অনেক লোকজন আসতেছে। এই গরমে সবাই ডাব খাইতেছে। গরমের কয়দিনে আমার ব্যবসাও ভালো হইতেছে।’
ঝিনুক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটক বেশি হলেও বিকাল ছাড়া কাস্টমার হয় না কারণ এই গরমে সবাই সমুদ্রে সময় কাটায় না হয় হোটেলে। সারাদিন কাস্টমার থাকলে বেশি বেচাকেনা হত।’
আরো পড়ুন : কলাপাড়ায় ১৩ বছরের এক কিশোরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন টুরিস্ট পুলিশ। সার্বক্ষণিক মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে পর্যটকদের। তীব্র গরমে কোন পর্যটক অসুস্থ হয়ে পরলেও আমরা তার সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করবো। আমাদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সদস্যরাও পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কলাপাড়া স্টেশনের টহল টিম ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সৈকত এলাকায় অবস্থান করি। পর্যটক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ফায়ার সার্ভিসের একটি টহল টিম সব সময় প্রস্তুত আছে। যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আমরা তৈরি আছি।’