শিরোনাম

তীব্র তাপদহে বিপর্যস্ত উপকূলের জনজীবন

Views: 39

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: তীব্র তাপদহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর জনজীবন। গতি কবল জেলার কলাপাড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া ও কর্মজীবি মানুষ। একটু স্বস্তির আশায় অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন গাছতলায়। ছুটছেন নদী তীরে। বেড়েছে ডাব, আখের রস, শরবত ও কাঁচা তালের চাহিদা।

প্রচন্ড খড়তাপে লোকসানে পড়েছেন বোরো ধান চাষী ও সবজি চাষীরা। আবাদির জমির অভ্যান্তরীন ছোটখাল-ডোবা-পুকুর শুকিয়ে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে মৌসুমী সবজি চাষীদের খেতে দেখা পানি সংকট। পানির অভাবে আর রোড়ের তীব্রতায় গাছ মরে যাচ্ছে। এতে লোকসানের শংকায় পড়েছেন সবজি চাষীরা।

এদিকে সবজি খেতের এমন বেহাল দশায় বাজারে আমদানী কমেছে সবজির। ফলে বাজারে বেড়ে গেছে সবজির দাম।

কলাপড়ার নীলগজ্ঞের কৃষক জাকির বলেন, তীব্র রোদের তেজ থেকে আবাদি জমির ফসল রক্ষা করা এখন দরকার। এর উপড় দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। নিরূপায় কৃষক। পুড়ে যাচ্ছে গাছ। ফলন কমে গেছে।

তীব্র তাপদহকে দু:সহনীয় করে তুলেছে বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং। দিনে-রাতে বারবার বিদ্যুতের আসা-যাওয়া ও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সকল বয়সী মানুষকে।

পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক উপস্থিত থাকলেও তীব্রতাপদহে এসব পর্যটক হয়ে পড়েছেন হোটেল বন্দী। দর্শনীয় স্থানগুলোর কার্যত পর্যটক শূন্য।

মাদারীপুর থেকে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক সাবের আহমেদ জানান, তীব্র গরমে সী-বীচ বেশ উপ্তত্ত হয়ে আছে। জুতা পায়েও বীচে হাটা কস্টদায়ক। স্বন্ধ্যার পড়েও একই অবস্থা। তাই পরিবার নিয়ে হোটেলে অবস্থান করছি।

আরো পড়ুন : বৃষ্টির কামনায় পটুয়াখালী ইসতিসকার নামাজ আদায়

হোটেল ফেন্ডস পার্ক ইনের ব্যবস্থাপক আল-আমিন বলেন, মোটামুটি ভাল পর্যটের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু এসব পর্যটক হোটেল থেকে বের হয়ে দ্রুতই হোটেলে ফিরে আসছেন। গরমে তারা বাহিরে টিকতে পারছেননা।

জেলার সকল হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ গরম জনিত রোগীর সংখ্যা। গত (বুধবার) ২৪ ঘন্টায় জেলার ৮ উপজেলায় ১১০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭৯ জন রোগী। কলাপাড়ায় জেলার বাউফল ও কলাপাড়া হাসপাতালে স্যালইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। (২১ এপ্রিল) জেলার কলাপাড়া উপজেলায় সত্তার ফারাজী নামে একজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত সত্তার ফরাজী উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের চর বালিয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা।

কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক তানজিলা হাসির তৃষা জানান, সত্তার ফরাজীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি ডায়রিয়া আক্রান্ত ছিলেন এবং তার কিডনি ড্যামেজ ছিলো। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এই চিকিৎসক সকলকে তেল জাতীয় খাবার পরিহার, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহির না হওয়া, বেশি বেশি পানি পান করা এবং পানি জাতীয় খাবার গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন। পটুয়াখালীর বাউফলে হিটস্ট্রোকে মোহাম্মদ শাহ-আলম (৫০) খান নামের এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।

২২শে এপ্রিল রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তিনি পুলিশের ঢাকা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। মৃত শহআলম বাউফল পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। শনিবার তিনি ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বাউফলে আসেন। রাত নয়টার দিকে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাউফল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

আবহাওয়া আফিস সূত্র জানিয়ে, আপতত বৃস্টির কোন সম্ভাবনা নেই। এই তাপদাহ আরো কিছদিন অব্যাহত থাকবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *