কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক দশক আগেও আমন মৌসুমের পর জেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পড়ে থাকত অনাবাদি। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। এসব জমিতে আমনের পরেই ফলছে বোরো, সূর্যমুখী, গম, ভুট্টা, তরমুজ, বাদাম, আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি। আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার, উন্নত চাষ পদ্ধতি, মিষ্টি পানির সংরক্ষণ, উন্নত বালাইনাশক ও লবণসহিষ্ণু উন্নত জাতের বীজের কারণে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার এক সময়ের এক ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে চার ফসলি জমিতে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। তরমুজের চাষ হয়েছে ২৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর বেশি। জেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে হয়েছে সূর্যমুখীর চাষ, যা গত বছরের তুলায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে শুধু কলাপাড়া উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। জেলায় প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে মুগডালের আবাদ। এ ছাড়া বাদাম, ভুট্টা, গম, মরিচ, সবজি, বাঙ্গি উৎপাদনেও রেকর্ড করেছে উপকূলের এই জেলা।
কৃষি বিভাগের এমন সমীক্ষায় সংশ্লিস্টরা মনে করছেন, প্রণোদনা, কৃষি উপকরণের সহজ প্রাপ্তিসহ মিষ্টি পানির সংরক্ষণ বাড়ানো গেলে উপকূলীয় এলাকায় চাষের জমি আরও বাড়বে।
উত্তর ঠিয়াখালী গ্রামের কৃষক জামাল হাওলাদার বলেন, ‘আমন ধানের পরে জমি পতিত থাকত। ইরি ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সেই জমিতে বাদাম, সরিষা, আলু চাষ করেছি। এখন সূর্যমুখী ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায়।’
একই গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ধান চাষ করে সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরাত। এখন আমনের পাশাপাশি বারো মাস সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।’
কৃষক খলিল মৃধা বলেন, ‘বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে খাল-ডোবা-পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় মিস্টি পানির অভাব দেখা দেয়। মিস্টি পানির সংরক্ষণ বাড়ানো গেলে চাষ সুবিধা পাওয়া যেত।’
আরো পড়ুন : পবিপ্রবি ও ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চুক্তি
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকর্তা মানিক দেবনাথ বলেন, ‘আমন চাষের পর জেলার উপকূলীয় এলাকার ৭০ ভাগ জমি পড়ে থাকত অনাবাদি। শুস্ক মৌসুমে লবণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কৃষক ফসল চাষ করলেও ভালো ফলন পেত না। পরে আবহাওয়া উপযোগী জাত নির্বাচন, বপনের সঠিক সময় নির্ধারণ ও সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা প্রদান, উপকরণ দিয়ে সহায়তা, নিয়মিত মাঠ তদারকি ও কৃষক মাঠ দিবস পালন করায় কৃষকরা আগ্রহী হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনার আমতলী উপজেলার এক ফসলি জমিকে চার ফসলি জমিতে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ জমি তিন ফসলিতে উন্নীত করা হয়েছে।’
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন বলেন, ‘কৃষি বিভাগের উৎসাহিতকরণ, নিয়মিত মাঠ তদারকি, সহযোগিতা ও লবণসহিষ্ণু ফসলের ভালো ফলনের কারণে কৃষকরা জমিকে এখন আর অনাবাদি রাখছেন না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি বিভাগের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, আগ্রহীকরণ ও প্রণোদনার ফলে আমন চাষের পরে তরমুজ, মুগ ডাল, মরিচ, সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষক। এসব শষ্যে উচ্চমূল্য পাওয়ায় তারা খুশি। উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালীতে লবণসহিষ্ণু জাতের বীজ সরবরাহ করায় এসব এলাকার পতিত জমি এখন তিন থেকে চার ফসলি চাষের আওতায় চলে আসছে।