এমন অবস্থায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ‘কঠিন হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মঙ্গলবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কার্যকারিতার ওপর ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের প্রভাবের বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি।
হাউস অব লর্ডসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক অধিবেশনে ক্যামেরন বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নির্মিত অবৈধ বসতি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তুলছে
হাউস অব লর্ডসের এই কমিটির সাত বছরের পুরোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠতে পারে এবং ‘কোনও পক্ষের কাছেই আর এটি কার্যকর হবে না’। এই রিপোর্টের বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে মঙ্গলবার ক্যামেরন বলেন, ‘পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের কারণে এটি (ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা) কঠিন হয়ে উঠছে, তাই প্রযুক্তিগতভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং আমাদের এটি সম্পর্কে ভাবতে হবে।’
ব্রিটিশ এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘… এটা কঠিন হয়ে গেছে, কিন্তু এটা অসম্ভব নয়… ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রত্বে সাহায্য করার জন্য স্বীকৃতি দেওয়াটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু শুধুমাত্র সবাই স্বীকৃতি দিয়ে একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে না। এমন জিনিসগুলো নির্ধারণ করতে হবে যা আসলে একটি রাষ্ট্র তৈরি করে: একটি সরকার, তাদের শাসন করার ক্ষমতা …।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি আসবে না।’
ক্যামেরন বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা নেই। সুতরাং আপনি যদি দেখেন, উদাহরণস্বরূপ, সৌদিরা ইসরায়েলের সাথে এই স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির করার চেষ্টা করেছে, এটি স্পষ্টতই সৌদি আরবের জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ, ইসরায়েলের জন্যও বড় পদক্ষেপ, তবে এই পদক্ষেপের একটি অংশ হবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করা।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
গাজায় চলমান পরিস্থিতি ও প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই গাজার পুরো পরিস্থিতি গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং প্রাণহানির ঘটনা গভীরভাবে দুঃখজনক।’
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাকে অর্থায়ন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে ক্যামেরন বলেন, যুক্তরাজ্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চলমান তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা