শিরোনাম

ফের রণক্ষেত্র বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল : আহত ১৫-২০ জন,বাস চলাচল বন্ধ

Views: 68

বরিশাল অফিস :: দ্বিতীয় দফা ভাংচুর মারামারি চালিয়ে আবারও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা। তবে এবার ভাংচুর হয়েছে টার্মিনাল এলাকায় থাকা মহেন্দ্র ও সিএনজি। প্রায় অর্ধশতাধিক মহেন্দ্র ও সিএনজি, অটোরিকশা ভাংচুর ও শ্রমিকদের পিটিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সংঘটিত দ্বিতীয় দফা এই হামলা ভাংচুর ঘটনায় কম হলেও ১৫-২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব বাস চলাচল। মহসড়ক অবরোধ করে রাখায় অন্যান্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন অভ্যন্তরীণ ছয় জেলার ১৩টি রুটের যাত্রীরা।


বরিশা‌লের কেন্দ্রীয় বাস টা‌র্মিনাল নথুল্লাবা‌দে শ্রমিক ইউনিয়নের দু’পক্ষের সংঘর্ষে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সাবেক ও বর্তমান মেয়র অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ দু-চারদিন পরপরই অচল করে দেয় এই টার্মিনাল এলাকা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। তাই বেশিরভাগ যাত্রীদের দাবী বাস টার্মিনাল এলাকা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত রাখা হোক এবং বাস শ্রমিক বা মালিক নয় এমন নেতাদের বাস টার্মিনাল থেকে দূরে রাখার দাবী করেন তারা।

শনিবার বেলা ১২টার পর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান যাত্রী, শ্রমিক ও পুলিশ প্রশাসন।

এ সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে মাদারীপুরগামী একটি বাস যাত্রী নিয়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। ওইসময় একটি মোটরসাইকেল বাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে সাইড নেওয়ার জন্য বাসের চালক হর্ণ বাজায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী নুরুল ইসলাম বাবাই নামের এক নেতা ও তার সহকারী বাসের চালককে মারধর করে। আর তাকে বাঁচাতে আরেকজন বাস শ্রমিক এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

এ সময় শ্রমিকদের একজন জানান, বাসচালক শাকিল ও সৌরভকে মারধর করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে এবং হামলাকারীদের আটক করে মারধরের চেষ্টাও করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন যাত্রী জানান, শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে একপর্যায়ে টার্মিনালের সামনের বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পাশাপাশি টার্মিনাল এলাকায় থাকা বেশকিছু ব্যানার পোস্টার ভাংচুর করে। পরবর্তীতে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সমঝোতার আশ্বাসে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিত স্বাভাবিক হলেও সন্ধ্যার পর তা পুনরায় অশান্ত ও রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী কবির সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যার দিকে ঘটনা সমাধান করে বাস চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় আবার বাস ও থ্রি-হুইলার শ্রমিকদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এ কারণে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হয়নি বলে জানান তিনি।

এর আগে দুপুরের ঘটনায় আহতরা জানান, যে বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েয়েছেন, তারা বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত সভাপতি কাজী কবিরের ঘনিষ্টজন। কবিরের লোকজন কিছুদিন ধরেই নথুল্লাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ফকির সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনিসহ নেতাকর্মীরা টার্মিনালের ভেতরে অফিস কক্ষে ছিলেন। চালকের ওপর হামলার খবর শুনে তাৎক্ষণিক তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।

তিনি বলেন, কি ঘটনায় হামলা তা আমি জানি না, তবে বহিরাগতরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ টার্মিনালের ভেতরে বহিরাগতদের নিয়ে আসতে পারবে না এবং কোনো প্রশ্রয়ও দিতে পারবেন না। আর এর ব্যতয় ঘটলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর শ্রমিকের গায়ে কেউ হাত দিতে পারবেন না, দোষ করলে আমাদের বলবেন আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এ ঘটনা শান্ত হতে না হতেই সন্ধ্যার কিছু পরে অতর্কিত হামলা ভাংচুর শুরু হয় নথুল্লাবাদ এলাকায়। পুলিশের সামনেই ভাংচুর ও মারামারি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসন।

যদিও তারা স্বীকার করেন যে, নথুল্লাবাদ টার্মিনাল কেন্দ্রীক পরিবহন সেক্টরের শ্রমিক নেতাদের মধ্যে দুটি গ্রুপ রয়েছে। যাদের মধ্যে থাকা বিরোধের সূত্র ধরেই টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা, সংঘর্ষ, মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছ। তবে এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত বলতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নথুল্লাবাদে শ্রমিক ইউনিয়নের দুই পক্ষের মধ্যে অনেকদিন ধরে সমস্যা আছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি থাকলেও উভয় কমিটিরই টার্মিনাল এলাকায় বর্তমানে সেবামূলক কোনো কার্যক্রম নেই। এখানে শ্রমিক ইউনিয়নের যে অফিস ছিল সেটি মে দিবস উপলক্ষে একপক্ষ খুলে দেয়। এতে অন্য পক্ষের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে এর আগেও দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় টার্মিনালের ভেতরে দুই পক্ষের মারামারি হয়। একপর্যায়ে তারা সড়কে এসে অবরোধ করে।

তিনি আরো বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দুইপক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়, যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে উসকানি দিয়ে তৃতীয় পক্ষ সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতারা। আর পুরো ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাস মালিক গ্রুপের বর্তমান মেয়র অনুযায়ী সভাপতি অসীম দেওয়ান। তিনি জানান, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *