শিরোনাম

শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও অদম্য সিয়াম

Views: 42

বরিশাল অফিস: জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. সিয়াম। ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। তাই চলাফেরায় ভরসা ক্রাচ আর মায়ের হাত। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও যেন অদম্য সিয়াম।

প্রতিদিন ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে এইচএসসি সমমানের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও টেকনোলজি (বিএমটি) কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন তিনি। ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২২ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে এখন ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএমটি কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন সিয়াম।

প্রতিদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে তিনি ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে পরীক্ষা দিতে আসছেন উপজেলা সদরের লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সিয়াম পার্শ্ববর্তী তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝির পুকুর পাড় এলাকার মোতুরুন বেপারী বাড়ির গার্মেন্টসকর্মী শাহজাহানের ছেলে। পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে সিয়াম সবার বড়। পরিবারের দরিদ্রতা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে সিয়ামের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে।

সিয়াম বলেন, আমি ঠিকমতো চলতে পারি না। তবুও প্রাথমিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পড়ালেখা করছি। এর জন্য সব সময় আমার পরিবার আমাকে সহযোগিতা করছে। মা সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন। কোথায়ও যেতে হলে মা-ই আমার সঙ্গে যায়। আমার স্বপ্ন গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করার। চাকরি করে পরিবারের অস্বচ্ছলতা দূর করবো ইনশাআল্লাহ।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সিয়ামের মা মোসা. নাছিমা বেগম বলেন, সিয়ামসহ আমার মোট তিন সন্তান। এর মধ্যে ছেলে একজন, মেয়ে দুইজন। ছেলে সিয়াম জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েও প্রতিবন্ধী। ঐ মেয়ে একটুও চলাফেরা করতে পারে না। তবে ছেলে সিয়ামকে হাত ধরে সহযোগিতা করলে কিছুটা চলতে পারে। তবে বেশি হাঁটতে পারে না। তাই মাঝে মধ্যে কোলেও নিতে হয়। সিয়ামের পড়ালেখা এই পর্যন্ত চলাতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমার কষ্ট হলেও ছেলেটার স্বপ্ন পূরণের জন্য সব সময় তাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। আমি চাই, প্রতিবন্ধী হলেও আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হোক।

সিয়ামের বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আকবর হোসেন বলেন, সিয়াম একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবেও যদি সিয়ামের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে সে সহজে স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখি অনেক সুস্থ-সবল ছেলে মেয়েরাও খুব বেশি পড়ালেখা করছে না। তবে শিক্ষার্থী সিয়াম প্রতিবন্ধী হয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তার উচ্চশিক্ষার জন্য সফলতা কামনা করছি। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সিয়ামকে তার সবকিছুই দেওয়া হচ্ছে। সিয়ামের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে যত ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে তা প্রদানের চেষ্টা করবো।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *