পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নের ৮৮ কিলোমিটার পাকা সড়কের চরম বেহাল দশা। খানা-খন্দকে একাকার হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মিত বিটুমিনাস কার্পেটিং এ সড়কের অধিকাংশ সিলকোট উঠে গেছে। বর্ষায় পানি জমে একাকার হয়ে যায়। অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিং এর অস্তিত্ব নেই। বালু, কাদামাটি, খোয়া বেরিয়ে গেছে। পাকা এ সড়কগুলো এখন যান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘদিন মেরামত না করায় সড়কগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। তবে গ্রামের মানুষের দাবি ছয় চাকার অবৈধ দত্যাকৃতির যান, হামজা কিংবা ট্রলি অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করে চলাচলের কারণে শুধু পাকা সড়ক নয়, আরও শত কিলোমিটার কাঁচা ও কয়েক কিলোমিটার হেরিংবন্ড রাস্তা ভেঙে গেছে।
এলজিইডি’র তথ্যমতে, তিন মিটার প্রস্থ ও এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক পাকাকরণে ৮০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ অবৈধ ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যানের (ট্রলি-হামজা) চাকায় (নির্মাণর ৩-৬ মাসেই) পিষ্ট হয়ে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে।
ফলে সরকারের শত শত কোটি টাকার পাকা সড়ক ছাড়াও আরও ৫০ কোটি টাকার কাঁচা মাটি কিংবা ইটের রাস্তার সর্বনাশ হয়েছে। অবৈধ এ যান রোধে নেই কোনো পদক্ষেপ। ফলে সরকারের গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন চিত্র বিবর্ণ হয়ে গেছে। সড়ক ধ্বংসের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
আরো পড়ুন : গলাচিপা উপজেলায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় এলজিইডি নির্মিত পাকা-কাঁচা মোট সড়ক রয়েছে এক হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলা সংযোগ সড়ক রয়েছে ১০টি, যার দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক রয়েছে ২৩টি। যার দৈর্ঘ্য ২২৯ কিলোমিটার। গ্রামীণ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক (এ টাইপ) রয়েছে ৫১টি। যার দৈর্ঘ্য ২৪২ কিলোমিটার। গ্রামীণ কম গুরুত্বপূর্ণ (বি-টাইপ) প্রত্যন্ত এলাকার সড়ক রয়েছে ৪৪৫টি। যার দৈর্ঘ্য ১৩৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্য চার শ্রণির সড়কের মধ্যে বিটুমিনাস কার্পেটিং (পাকা) সড়ক রয়েছে ৩০৪ কিলোমিটার। একশ’ সাত কিলোমিটার সড়ক রয়েছে এইচবিবি। আরসিসি ও সিসি সড়ক রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার। এছাড়া কাঁচা মাটির সড়ক রয়েছে এক হাজার ৫৫৪ দশমিক ৬১ কিলোমিটার। কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নর হিসাব এটি।
ইউনিয়ন পরিষদর চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্যমতে, ১২টি ইউনিয়নের অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ৮৮ কিলামিটার পাকা বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক খুব খারাপ হয়ে গেছে। যা যান চলাচলের অনুপযোগী। এর মধ্যে টিয়াখালী ইউনিয়নের প্রায় ৭ কিমি, চাকামইয়া ৭ কিমি, ধানখালী ৮ কিমি, চম্পাপুর ১.৫ কিমি, লালুয়া ১২ কিমি, বালিয়াতলী ১০ কিমি, ধুলাসার ৯ কিমি, মিঠাগঞ্জ ৯ কিমি, নীলগঞ্জ ১৫ কিমি, মহিপুর ২ কিমি, লতাচাপলী ৭ কিমি এবং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে ১.৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর মধ্যে হেরিংবন্ড ছাড়াও কাঁচা আরও ১০০’ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা রয়েছে। বর্ষাকালে হাঁটু সমান কাদা হয়ে যায়। লালুয়ার অধিকাংশ সড়ক লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এসব সড়ক পাকা না মাটির তা পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসন তপন বিশ্বাস। মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। তারা জনস্বার্থে জীর্ণদশার এই সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের দাবি জানান।
আরো পড়ুন : রাঙ্গাবালীতে চেয়ারম্যান পদে ৪ জনসহ ১১ জনের মনোনয়ন দাখিল
কলাপাড়া এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসান জানান, আট কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে, যা শেষ পর্যায়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর আরও প্রায় ১৫ কিমি সড়ক মেরামতের টেন্ডার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো পাকাকরণ করার পাশাপাশি মেরামত করা হবে। এছাড়া সড়ক নষ্ট করতে না পারে এজন্য ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির ওই যান হামজা কিংবা ট্রলি চলাচল বন্ধে তারা কলাপাড়া এবং মহিপুর থানার ওসিদ্বয়কে অনেক আগেই চিঠি দেয়া হয়েছে। যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।