বরিশাল অফিস :: আগামী ১৭ জুন মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ উল আযহা। পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দিনটি উদযাপন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তাই দক্ষিণাঞ্চলবাসির কোরবানির পশুর চাহিদা পুরণে প্রতিবারের ন্যায় এবারো বসছে পশুর হাট।
প্রাণীসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কোরবানি উপলক্ষে মিলবে মোট ৩২৮টি গরু-ছাগলের হাট। এ হাটগুলোতে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে ১৩৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। যারা হাটগুলোতে কৃত্তিম উপায়ে মোটাতাজা করা, রোগমুক্ত এবং কোরবানি দেওয়ার উপযুক্ত পশু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করণে দায়িত্ব পালন করবেন।
এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. লুৎফর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোরবানির তিনদিন আগে শেষ দিন পর্যন্ত হাটগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সদস্যরা।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য মতে, বিভাগের ছয়টি জেলায় এবার স্থায়ী এবং কোরবানি উপলক্ষে অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ৩২৮টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ৭০টি, ভোলা জেলায় সর্বোচ্চ ৯৮টি, পটুয়াখালীতে ৪৭টি, ঝালকাঠিতে ৩৪টি, পিরোজপুরে সর্বনিম্ন ২৫টি এবং বরগুনা জেলায় ৪৯টি পশুর হাট বসছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং সদর উপজেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবারো বরিশাল সিটি এলাকায় তিনটি স্থায়ী এবং অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে রূপাতলী এলাকায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে, কাউনিয়া টেক্সটাইল মোড়ে একটি করে অস্থায়ী এবং বাঘিয়া এলাকায় একটি স্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া সদর উপজেলার চরমোনাই, কাগাশুরা, রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি করে স্থায়ী পশুর হাট বসছে। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সদর উপজেলা থেকে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বরিশাল জেলার ৭০টি হাটের জন্য ৩৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, ভোলার ৯৮টির জন্য ২১টি, পটুয়াখালীর ৪৭টির জন্য ২৮টি, ঝালকাঠির ৩৪টির জন্য ১১টি, পিরোজপুরের জন্য ২৫টির জন্য ২০টি এবং বরগুনা জেলার ৪৯টি হাটের জন্য ১৬টি মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদ অনুমোদিত অস্থায়ী হাটগুলো কোরবানির তিনদিন আগে থেকে বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সাপ্তাহিক স্থায়ী হাটগুলোও কোরবানি উপলক্ষে ঈদের আগে টানা তিনদিন বেচা-বিক্রি করতে পারবে।
বরিশাল গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় নির্বাচিত হয়েছেন মনির হোসেন ও যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রি
তিনি জানিয়েছেন, হাটে কোরবানির উপযোগী পশু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করবে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। বিশেষ করে পশু রোগাক্রান্ত বা কৃত্তিম উপায়ে মোটাতাজা করে হাটে আনা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি দেখবেন টিমের সদস্যরা।
এই কর্মকর্তা জানান, প্রাণিসম্পদ দপ্তরে জনবল সংকট রয়েছে। যে কারণে পর্যাপ্ত মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। যারা আছেন তাদের দিয়েই পুরো বিভাগের কোরবানির পশুর হাটে সেবা দেওয়া হবে। যারা সেবা দিবেন তাদের মধ্যে ৩২ জন সার্জন এবং ৩৮ জন চিকিৎসক কর্মকর্তা পশুর হাটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, গত বছর বরিশাল বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬১১টি। গত বছর যে সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে সেই সংখ্যক পশুই এবার কোরবানির চাহিদা নির্ধারণ করেছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। চাহিদার অনুকূলে এবার বিভাগে ২৬ হাজার ৫৭৮ জন খামারীর খামারে হৃষ্ট-পুষ্ট বা মোটা-তাজাকরণসহ কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা রয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪টি। সে হিসেবে চাহিদার তুলনায় ১৬ হাজার ৮৪৩টি পশু বেশি রয়েছে বরিশাল বিভাগে।
এর পাশাপাশি রয়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ী, গৃহস্থ ঘরে লালন-পালন করা পশু। তাছাড়া কোরবানি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রির উদ্দেশে নিয়ে আসা হয় অসংখ্য গরু-ছাগর। যে কারণে এবার দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে আশাবাদী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।