শিরোনাম

বরিশালের ৮২ হাটে বেচাকেনা জমজমাট হবে শুক্র-শনিবার

Views: 34

বরিশাল অফিস :: পবিত্র ঈদুল আজহার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পশুর হাটগুলোয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম বাড়ছে। তবে শুক্র ও শনিবার বরিশাল জেলার হাটগুলো বেশি জমজমাট হওয়ার পাশাপাশি বেচাকেনাও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। হাটগুলোয় আসা ক্রেতার জানিয়েছেন, গতবছরের তুলনায় এবারে পশুর দাম বেশি। তাই সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পশু কিনতে এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটছেন তারা। যদিও অল্প লাভে কোরবানির পশু বিক্রির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পশু খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে লালন-পালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন খামারিরা।

সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হাট-বাজার শাখা সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবারে মোট ৮২টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এরমধ্যে জেলার ১০টি উপজেলায় স্থায়ী ২৫টি, অস্থায়ী ৫৩টি এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী ১টি ও অস্থায়ী ৩টি হাট বসেছে।

আর বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছরে বিভাগের ছয় জেলায় মোট কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬১১টি। তবে বিভাগের ২৬ হাজার ৫৭৮ জন খামারির কাছে মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪টি। ফলে চাহিদার পরেও উদ্বৃত্ত থাকবে ১৬ হাজার ৮৪৩টি পশু।

যেখানে মোট হিসেবের মধ্যে বরিশাল জেলায় কোরবানির পশুর প্রয়োজন ১ লাখ ১২ হাজার ৯৪৭টি, আর মজুদ রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৭টি। সব মিলিয়ে বিভাগের মোট মজুদের মধ্যে কোরবানি যোগ্য পশুর মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার ৬৪২টি ষাঁড়, ৬৭ হাজার ৬৬৪টি বদল, ৩৮ হাজার ৩১৭টি গাভী, ৯ হাজার ৭৯২ মহিষ, ১ লাখ ১০ হাজার ৯৪৯টি ছাগল, ১২ হাজার ৩৫টি ভেড়া এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৫৫টি।

আর এই পরিসংখ্যানে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী কোরবানির পরও বিভাগে প্রায় ১৭ হাজার কোরবানি যোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তবে নির্দিষ্ট পশুর প্রতি ঝোঁক থাকলে চাপ বাড়বে সেদিকে, সেক্ষেত্রে জোগান দিতে না পারলেও ওই পশুর দাম আরও বাড়বে।

তবে নির্দিষ্ট করে গরুর প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক থাকায়, বিগত সময়ের মতো এবারও বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকেও বরিশালের হাটগুলো গরু আসছে। বরিশাল নগরের বাঘিয়া ঝাউতলা হাটে গরু উঠেছে। এই হাটেও কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা থেকে বেশি গরু এসেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এই হাটে ১৫-২০টি গরু বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার। তবে শুক্রবার থেকে চাঁদ রাত পর্যন্ত চলা এই হাটে পশুর সংখ্যা বাড়বে। একই অবস্থা থাকবে জেলার ১০টি উপজেলার ৭৮টি কোরবানির পশুর হাটের অধিকাংশের।

হাটগুলোর ইজারাদাররা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যারা হাটে আসছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগেই ছোট বা মাঝারি আকারের গরু খুঁজছেন। গত বছর যে সাইজের গরুর দাম নেওয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এবার সেই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে দেড়লাখ টাকার ওপরে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্রেতাই ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে গরু খুঁজছেন।

এদিকে পণ্যের দাম ও গরু পালনে খরচ বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন। তিনি বলেন, গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। গরু লালন-পালনে খরচ বেশি হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। ন্যায্য দাম না পেলে আমাদের লোকসান হবে।

বরিশালের এমইপি অ্যাগ্রোর ম্যানেজার রাফিউর রহমান ওমি জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটসহ নানা অজুহাতে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। পশুর ওষুধ থেকে শুরু করে ভুসি, ক্যাটল বুস্টার, গমসহ গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পশুপালনেও খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ।

সব কিছুর পরও আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোরবানিতে ক্রেতাদের ঠকানোর কথা বলছেন না কেউ। আর এসব কিছুর পরও বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, খামারিদের কাছে পশুর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে সংকটের সুযোগ নেই।

এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলী আশরাফ ভূঞা জানান, ইজারাদারদের নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, স্বেচ্ছাসেবক ও নৈশ প্রহরী রাখাসহ পশুর হাটে অবশ্যই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে সরকার বা ইজারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত খাজনার বেশি আদায় করা যাবে না। আর্থিক লেনদেনের সময় প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারেন। পশুর হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *