শিরোনাম

মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক

Views: 95

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: একের পর এক দুর্ঘটনা সড়ক পথে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী রুটের যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। তাই নিরাপত্তার খাতিরে অনেক যাত্রী আবার নৌ-পথে যাতায়াত শুরু করেছেন।

যার প্রমাণ মিলেছে বরিশাল ও পটুয়াখালীর নদী বন্দরে পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষগুলোর ভিড় দেখে।

লঞ্চের যাত্রী ওমর ফারুক বলেন, গত কয়েকদিনে শুধু সড়কে দুর্ঘটনার খবরই শুনছি। নিজেও পটুয়াখালী আসার পথে একটুর জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি। তাই লঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাসের থেকে অন্তত নিরাপদে তো যেতে পারবো।

যদিও পদ্মা সেতু চালুর পর সময় স্বল্পতার কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সড়ক পথে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতের দাবি বেশিরভাগ যাত্রীর।

ঢাকা-পটুয়াখালী সড়কপথে নিয়মিত চলাচলকারী বাস যাত্রী ফাহিম রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রতিনিয়ত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঢাকা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটের মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত দীর্ঘ মহাসড়কের ধারণক্ষমতা আছে ২০২২ সালের আগের মতোই। যদিও কিছু কিছু বাঁকে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে, তবে তা কার্যত তেমন উপকারে আসছে না এখনও। এই যাত্রীর মতে, প্রয়োজন অনুসারে মহাসড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় গতির প্রতিযোগিতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

সম্প্রতি দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী মিজানুর রহমানের মতে, ঈদ-কোরবানির সময়টায় চালকরা একটানা বেশি ডিউটি করায় ক্লান্ত থাকেন। আর যেখান থেকে ঘুমের ভাব হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। যে কারণে তিনিও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এখন নিয়মিত লঞ্চে যাতায়াত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে গণমাধ্যমও বলছে, ১৫ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ছয়দিনে শুধু বরিশাল জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৯ জন। পক্ষান্তরে নৌ-পথে দুর্ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি এ কয়দিনে।

বাস চালকরা বলছেন, শুধুই গতি নয়, অনভিজ্ঞ চালকসহ মহাসড়কে বৈধ-অবৈধ ও মিশ্র প্রযুক্তির গাড়িই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

বাসের চালক নয়ন বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত একমাত্র মহাসড়ক, যেখানে অবাধে দূরপাল্লার গাড়িগুলোর সাথে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, টমটম, নছিমন, করিমন, সিএনজি, আলফাসহ সকল ধরনের থ্রি-হুইলার চলাচল করে। অথচ বিআরটিএর অনুমোদন পাওয়া-না পাওয়া এসব যানবাহন মহাসড়কে চলার কথা না। সেই সাথে বাজার-ঘাটে ঘেরা মহাসড়কে অটো ও ম্যানুয়াল প্রযুক্তির গাড়ির পাশাপাশি, তেলের- ব্যাটারির, নতুন-পুরাতন বিভিন্ন গতির গাড়ি চলাচল করছে।

আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে চাচার মারধরে ভাতিজার মৃত্যু

তিনি আরো বলেন, সবমিলিয়ে দিনের বেলা যেমন তেমনভাবে গেলেও রাতে তো আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে ভাঙ্গা-বরিশাল- কুয়াকাটা মহাসড়ক। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, টমটম, নছিমন, করিমনের মতো অবৈধ অনেক যানবাহনের তো কোনো ধরনের বাতিই থাকে না, আবার যাদের আছে তাদের গাড়ির সামনে পেছনের সবগুলো বাতি ঠিকভাবে জ্বলে না। ফলে গাড়িটা কতখানি প্রশস্ত কিংবা চালক ব্রেক কষল কিনা তা বোঝা যায় না। সবমিলিয়ে যে অবস্থা তাতে এ মহাসড়কে বাস চালনা করতে একজন চালককে কতটা বেগ পেতে হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। আর হিসেবের গড়মিল হলেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন দোষ হয় পরিবহন চালকদের।

পরিবহন চালকদের মতে দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে মহাসড়ক প্রশস্ত করার পাশাপাশি সর্বপ্রথমে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, নয়তো বিমুখ হবেন বাস যাত্রীরা। একই কথা জানালেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারাও।

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল মোল্লা মুঠো ফোনে বলেন, এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সর্বপ্রথম মহাসড়ক প্রশস্ত করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ চলাচলে জায়গায় জেব্রা ক্রসিংসহ রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা রাখা এবং মহাসড়কের পাশ ধরে হাঁটার জায়গা প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, রাস্তা সরু হওয়ায় বর্তমান সময়ে ওভারটেক করতে গিয়ে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি রাস্তার পাশে চলাচলের জায়গা না থাকায় মানুষ যানবাহনে চাপা পড়ছে। গেল কোরবানির ঈদের আমরা গরুর গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচলের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রীবাহী যানবাহনের ছাদে লোক না নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক ছিলাম। সেইসাথে মহাসড়কে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চলাচল রোধ, থ্রি-হুইলারসহ আনফিট গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। আর এজন্য বিভিন্নভাবে মহাসড়কে আমাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। তবে নিজ নিজ পর্যায় থেকে সবাইকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ এই কর্মকর্তার।

এদিকে এবারের ঈদে পটুয়াখালী-ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বিগত দিনগুলোর থেকে বেশি থাকায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *