পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রে জিম্মি নদী তীরবর্তী দশমিনা উপজেলার হাজার হাজার ক্রেতার চড়া দামে মাছ কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে। শক্তিশালী সিন্ডিকেট ও বাজার ইজারাদারদের পকেট কাটার কৌশলে অসহায় আত্মসমর্পণ ক্রেতাদের। উপজেলা সদরের মাছ ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা আর অসদাচরণ এবং অপমান-অপদস্ত হওয়ার কারণে আত্মসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। রাজধানী ঢাকার চেয়ে তুলনামূলক নদী তীরবর্তী এলাকায় মাছের এমন চড়া দাম হতবাক করেছে সবাইকে। অন্যদিকে বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় হতভম্ব সবাই।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা সদরের মাছ বাজার থেকে কাটাখালী জেলে পল্লির দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। এ ৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দালালের হাত ধরে উপজেলা সদরে মাছ এলে তার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করা জেলেরা পানির দামে মাছ বিক্রি করেন ৩ শ্রেণির পাইকারের কাছে।
এরপর আবার আড়তদারদের দাদনের কাছে জিম্মি জেলেদের ভাগ্য বন্দি রয়ে যায় ওই দাদনের খাতায়। দীর্ঘ বছর জেলে পেশায় থেকেও ভাগ্য বদল দূরের কথা, ঋণের বোঝা নিয়ে মারা যেতে হয় জেলেদের।
অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রতম এ উপজেলার মানুষের কাছে মাছ-ভাত দিন দিন যেন বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।
আরো পড়ুন : জামিন বেরিয়েই বিচারকের নামে বেফাঁস মন্তব্য বাউফলের আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যানের
দশমিনা সদরের মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি সামান্য একটু বড় সাইজের চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০, জাটকা ১২০০, মাঝারি ১৬০০, পোয়া ৮০০ ও তপুসি (ছুড়ড়া) ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চাষ করা পাঙাশ আড়াইশ আর তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা বা তার বেশি দরে।
কাটাখালী জেলে পল্লিতে গিয়ে কথা হয় মো. আব্দুর রাজ্জাক খাঁ, জয়নাল সিকদার ও মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারের সঙ্গে।
তারা জানান, মোটামুটি সামান্য একটু বড় সাইজের চিংড়ি ৫০০, জাটকা ৬০০, পোয়া ৪০০ ও তপুসি (ছুড়ড়া) ৩০০ টাকা কেজি দরে দালাল, খুচরা বিক্রেতা আর আড়তদারদের কাছে বিক্রি করছেন তারা। অন্যদিকে চাষ করা পাঙাশ আর তেলাপিয়া ১২০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
তারা আরও জানান, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে আমরা ন্যায্য দাম পাই না। অথচ দালালরা জেলেদের থেকে মাছ কিনে তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। এর মধ্যে আড়তদাররা প্রতিকেজি মাছ ওজনের চেয়ে ১০০ গ্রাম বেশি নিয়ে এক কেজির দাম দিচ্ছেন।’
মো. আকবর নামে এক ক্রেতার দাবি, বাজার তদারকি আর দশমিনা মাছ বাজারে গড়ে ওঠা একাধিক সিন্ডেকেটের কারণে মাছের বাজার চড়া। সবচেয়ে দরিদ্রতম উপজেলায় মাছের বাজার এমন চড়া হওয়ায় গরিবের পাঙাশ আর তেলাপিয়াই একমাত্র ভরসা। জেলেদের সরাসরি বাজারে মাছ বিক্রির সুযোগ না থাকায় হাত বদলেই মাছের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
পটুয়াখালী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ শোয়াইব মিয়া বলেন, দশমিনায় যখন অভিযান পরিচালনা করা হবে, তখন বিক্রেতাদের চড়া দামে মাছ বিক্রি না করার জন্য সতর্ক করা হবে।