বরিশাল অফিস :: কখনো গান গেয়ে কিংবা কখনো গানের তালে তালে নেচে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছেন। সেজেছেন বিখ্যাত পপ স্মার্ট মাইকেল জ্যাকসনের অবয়াঅবে। চোখে সানগ্লাস, মাথায় লাল কাপড় পেচানো গোলাকার টুপি, পায়ে বুট জুতা। পরনে বেশ পরিপাটি মার্জিত পোষাক। ফুরফুরে মেজাজে ভোলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করেন। স্মার্ট চানাচুর বিক্রেতা হিসেবে তার যতেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। নিজস্ব পরিকল্পনায় মোটর বিশিষ্ট তিন চাকাওয়ালা একটি গাড়ি। প্রয়োজনে পায়ে চালানোর জন্য প্যাডেলও আছে। এসেসের তৈরী প্রয়োজনীয় বক্স, ঘটি-বাটি, চানাচুর গরম রাখার কয়লাবিশিষ্ট একটি বক্স, বিভিন্ন মশলার পট। গরম চানাচুরের সাথে পেয়াজ, শসা, কাঁচা মরিচ, গাজর, সরিষার তৈলসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা ব্যবহারে চানাচুর স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার উত্তর বাসস্যান্ডে এমন এক চানাচুর বিক্রেতাকে বাহারি গানে ডাকতে দেখা যায় ছোট ছোট সোনামনিদেরকে। নাম তার জুয়েল। বয়স ২৫ বছর। বাবা জসিম মিয়া ও মা রহিমা বেগম। তিনি ভোলা ও বোরহানউদ্দিনের মধ্যেখানে খায়ের হাট বাজারের পাশেই গাড়িঘাটায় বসবাস করেন। কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন পেশার মানুষদেরও ভিড় লক্ষ্যে করা যায় তার চারপাশে। ক্রয় করেন স্বাদে গুণে অনন্য ঘটি গরম চানাচুর।
স্থানীয় মাদরাসা শিক্ষক মাও: আবদুল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন সবজি, মশলা ব্যবহার করার কারণে এই চানাচুর স্বাদ হয়।’হোটেল ব্যবসায়ী আলী আকবর, কার ড্রাইভার মো: জিয়াউল হক, বীকন ফার্মার প্রতিনিধি মো: ইলিয়াছসহ সবাই একই মতামত দেন।
একান্ত আলাপচারিতায় জুয়েল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি আগে হোটেলে কাজ করতাম। একদিন ইউটিউবে মাইকেল জ্যাকসনের একটি গান দেখি। সেই থেকে আমি তার ভক্ত। আমার সারাদিনে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার চানাচুর বিক্রি হয়। দুই হাজার টাকা লাভ হয়। আমি অনেক পরিশ্রম করি। আমি পাঁচ বছর ধরে চানাচুর বিক্রি করছি। আমাদের পরিবারের ৬ সদস্যর সংসার চলে এর ওপর। আমাদের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি ছিল না। কিছুদিন আগে আমরা দুই লাখা টাকায় তিন শতক জমি ক্রয় করি এই ব্যবসা থেকে।’
বিয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ব্যবসা নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। তখন আমি লজ্জা পাই। কর্ম করে খাচ্ছি, চুরি-ডাকাতি তো করছি না। ভবিষ্যতে একটি দোকান নেয়ার ইচ্ছা আছে।’