শিরোনাম

ইলিশ আহরণে জেলেদের ‘জিপিএস’ প্রযুক্তি ব্যবহার

Views: 26

বরিশাল অফিস :: জলবাযু পরিবর্তনের কারণে যেমন কমেছে মাছের উৎপাদন, তেমনিভাবে নদীতে চলাচলে তৈরি হচ্ছে নানান সংকট। জেলেরা সারাদিন নদীতে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। নদীতে ডুবচর আর দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

চরফ্যাশনের নদনদীতে এমনি সংকট দূর করতে এবার জেলেদের ট্রলারে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ফিশ ফাইন্ডার জিপিএস সুবিধা। যার মাধ্যমে জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ ধরতে যাওযার সময় প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা, নিজেদের গতিপথ ও মাছের পর্যাপ্ততা নির্ণয় করতে পারবে।

এতে করে একদিকে যেমন জেলেরা নদী থেকে মাছ পাবেন, তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হতে পারবেন। প্রকৃতি দুর্যোগ মোকাবিলা করতেও সক্ষম হবেন।

সাগর ও নদীতে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল চরফ্যাশন উপকূলীয় এলাকার দুই লাখেরও বেশি জেলে। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তারা অথৈ সমুদ্রের হাতছানিতে ছোট ছোট নৌযানে করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছেন গভীর সাগর পর্যন্ত। এ এক চ্যালেঞ্জিং পেশা, নেশাও বটে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করে কমে যায় চরফ্যাশনের জলসীমানায় ইলিশের বিচরণ।

জেলেরা বলছেন, এবারের মতো এত কম ইলিশ পাইনি কোনো বছর। যার ফলে তারা ও আড়তমালিক এবং ইলিশ ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, ধারদেনায় জড়িয়ে পড়েছে। নদীতে এখন ডুবচর তাই সঠিক স্থানে জাল ফেলতে পারছেন না জেলেরা।

এমন প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে তারা দলগতভাবে জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।

জেলার মনপুরা চরফ্যাশনের ঢালচর চরকুকরি মুকরি, মনুপুরা, চরকাজল, মুজিবনগর সামরাজ, কচ্ছপিয়া মাইনুদ্দিন, কুয়াকাটা, মহিপুর এলাকার ট্রলারগুলোতে চোখে পড়ছে এখন জিপিএস পদ্ধতি। এই আধুনিক সুবিধা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেলেরা তাদের নিজেদের অবস্থান নির্ণয়ের পাশাপাশি কোথায় মাছ আছে তা খুব সহজেই বলতে পারেন। তা ছাড়া তাদের চলার পথে ডুবোচর আঘাত আনছে কিনা এটিও তারা সহজে নির্ণয় করতে পারছেন।

জেলেরা জানান, আমরা এখন গভীর সাগরে জিপিএস মনিটরে দেখে কোথায় মাছ আছে তা নির্ণয় করে জাল ফেলতে পারছি। তাই আগের থেকে এখন অনেক মাছ ধরার সুবিধা বাড়ছে। শুধু ইলিশ নয়, আমাদের জালে এখন হরেকরকমের মাছ ধরা পড়ছে।

চরফ্যাশন উপকূলীয় এলাকায় বেসরকারি উন্নযন সংস্থা (এফডিএ) প্রথমে এই সুবিধা তুলে দিয়েছে জেলেদের হাতে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক কামাল উদ্দিন জানান, জেলেরা যদি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের সময় তারা নিজেদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারবেন। তারা এ যাবত চরফ্যাশনের বিভিন্ন মাছঘাটে ২৫টি জিপিএস জেলেদের ট্রলারে সংস্থাপন করেছেন।

চরকুকরির চেয়ারম্যান বলেন, জিপিএস সুবিধার মাধ্যমে জলবাযু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে জিপিএস কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন মিনার বলেন, জেলেদের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াও সাগরে সাধারণভাবে মৎস্য সম্পদ আহরণে কতসংখ্যক মাছ ধরার ট্রলার বা নৌযান কোন অবস্থানে রয়েছে তা মনিটরিং করার মতো আধুনিক ব্যবস্থাপনা এখনো প্রয়োগ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ সমাধান দিতে পারে জিপিএস। এ এলাকার সব জেলেকে এ সুবিধার দেওয়া হলে তারা সাগরে কম সময়ের মধ্যে বেশি মাছ মারতে পারবেন। পাশাপাশি তারা শক্ত হাতে দুর্যোগকালের সময় মোকাবিলা করতে পারবেন।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *