শিরোনাম

আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত বিএনপি, মাঠে সরব আ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

Views: 857

মো: আল-আমিন (পটুয়াখালী): আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর কয়েক মাস। কিন্তু বসে নেই পটুয়াখালীর চারটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিভিন্নভাবে ভোটারদের জানান দিচ্ছেন নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ জানান দিলেও গোপনে এগোচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়ে বর্তমান সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে দেশের অন্য জেলার চেয়ে পটুয়াখালী বর্তমানে অনেক এগিয়ে আছে। যে কারণে পটুয়াখালীর চারটি আসনেই মাঠে বিচরণ করছেন শুধু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এত দিন যারা কেন্দ্রে ছিলেন তারাও বার বার ছুটে আসছেন নিজ এলাকায়। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারাও বসে নাই। সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কৌশলে জানান দিচ্ছেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে।

তবে বিএনপির কোনো সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এখনও নির্বাচনী কলাকৌশলে দেখা না গেলেও দুটি আসনে জামায়াত এবং ঐক্য পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে।

পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকী) : বিভিন্ন উপায়ে গত ৩/৪ বছর ধরে এ আসনের প্রতিটি এলাকায় দলীয় নেতা কর্মীসহ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় যাদের পদচারণা সবচেয়ে বেশি ছিল তিনি হলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ক্লিন ইমেজের এই নেতার প্রতি রয়েছে দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত আস্থা।  যার প্রমাণ পাওয়া যায়  বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। আওয়ামীলীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদকও তার প্রতি দলীয় প্রধানের আস্থার যথাযথ প্রতিদান দিয়েছেন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে। দলীয় নেতাকর্মীরা আশা করছেন নেত্রী আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে এর প্রতিদান দিবেন।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ঢাকায় বসবাস করলেও প্রায়ই ছুটে আসেন পটুয়াখালীতে। তিনি বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় পটুয়াখালীর বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রমে তিনি প্রায়ই উপস্থিত থাকেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ে আরও আছেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আলী আশরাফ।

আফজাল হোসেন ও আলী আশরাফ দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বিগত বছরগুলোতে এ আসনের দলীয় নেতাকর্মী ও অসহায় গরিব মানুষদের মাঝে আর্থিক সাহায্যের চেক হস্তান্তর করেছেন। এর মাধ্যমে উভয়ই সাধারণ মানুষের সহানুভূতি ও দৃষ্টি কেড়েছেন।

এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দৈনিক পটুয়াখালী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ মৃধা।

এছাড়াও নির্বাচনী মাঠে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া, দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ হাওলাদার,  জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান মোহন মিয়া, জেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি মো. শাহজালাল বাচ্চু মোল্লা।  তবে বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকলেও মো. শাহজাহান মিয়া একজন ত্যাগী নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখেন।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে একক ভাবে মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলহাজ আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তালিকায় নাম আছে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাষু সরকার কুট্টি,  জেলা বিএনপির সদস্য মোশতাক আহমেদ পিনুর। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও এখান থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) :  পটুয়াখালীর চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের গ্রুপিং রয়েছে এ আসনে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক হত্যা, আহত, পঙ্গুত্ববরণসহ হরহামেশাই লেগে আছে গ্রুপিং আর দ্বন্দ্ব। যে কারণে এখানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ঘাঁটিতে তাদের প্রার্থী বদল না করলে এবার ফাটল ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। এক চেটিয়া আওয়ামী লীগের সাত বারের এমপি আসম ফিরোজের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রকাশ্যেই জানান দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমাবেশে; এমন কি হামলা-সংঘর্ষের ঘটনার পাল্টা জবাব দিয়েও। গোটা উপজেলা আওয়ামী লীগ এখন তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। যে কারণে সকলের দৃষ্টি এখন বাউফলের দিকে।

এখানে আলোচনায় আছেন উপজেলা আ. লীগের সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার, বীর উত্তম মরহুম শামসুর আলম তালুকদারের ছেলে জেলা আ. লীগের সদস্য শিল্পপতি হাসীব আলম তালুকদার, শিল্পপতি এস এম ফিরোজ আলম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সামসুল হক রেজা এবং  ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির  সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম শাহীন।

বিএনপির তালিকায় আছে কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেন, সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার, কেন্দ্রীয় শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের সভাপতি আনিচুর রহমান আনিচ।

তবে এখান থেকে জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের ঢাকা দক্ষিণ শাখা সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত বলে তিনি নিজে দাবি করেছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের কারণে তৃণমূলে তারা নিজেরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করছেন। জেলার মধ্যে অন্তত এই আসনটিকে তারা যেন জয়ী হয় সেই আদর্শ নিয়েই তারা এগোচ্ছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে গোটা জেলায়। আবার বিএনপির সাথে জামায়াতের ঐক্য হলে সেক্ষেত্রেও এখান থেকে জামায়াত নেতা মাসুদের প্রার্থী হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এমন দাবি অনেক বিএনপি নেতৃবৃন্দেরও।

এছাড়াও শোনা যায় সাবেক বিচারপতির ছেলে যুবলীগ নেতা, ওয়ান ইলেভেনের রাজপথের সৈনিক জোবায়দুল হক রাসেলও প্রার্থী হবেন।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) : গলাচিপা আর দশমিনা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি বিভিন্ন কারণে বেশ আলোচিত। সাবেক এমপি বিতর্কিত আলোচক গোলাম মাওলা রনি এবং গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ঢাবির সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এর গ্রামের বাড়ি এই আসনে হওয়ায় এমনিতেই সারা বছর কম বেশি আলোচনায় থাকে। মূলত আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত থাকলেও এবারের নির্বাচনে বিএনপি থেকে যদি সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মামুনকে প্রার্থী দেওয়া হয়, তাহলে তার জয়ের ব্যাপারে সবাই আশাবাদী। কারণ দলমত নির্বিশেষে এলাকাবাসীর জন্য অনেক কাজ করেছেন এবং বেকার যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। তারপরেও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে আসনটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

এখানে যাদের নাম শোনা যায় তারা হলেন বর্তমান এমপি এস এম শাহজাদা। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এলাকার সকল উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। সাবেক বিজিবি প্রধান লে. জেনারেল (অব.) আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক কামরান সাহিদ প্রিন্স মহব্বত ও আ স ম জাওয়াদ সুজনও রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায়।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মো. হাসান মামুন এখান থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় নেতৃবৃন্দরা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তালিকায় আছেন সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. শিপলু খান। তবে এখান থেকে ঐক্য পরিষদের প্রার্থী হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) : জেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক তিন মেয়াদে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে এ আসনটিতে। যে কারণে আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু এখানেও আওয়ামী লীগে রয়েছে গ্রুপিং আর দ্বন্দ্ব। যার খেসারত দিতে হচ্ছে তৃণমূলকে। আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের কারণেই এখানে ইসলামি আন্দোলন শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যার রেজাল্ট পাওয়া গেছে বিগত ইউপি পরিষদ নির্বাচনে। জেলার মধ্যে শুধুমাত্র এই আসন থেকে হাতপাখার প্রার্থীরা তিনটি স্থানে জয়ী হয়েছে। অথচ বর্তমান এমপি এবং সাবেক এমপির ভোটব্যাংকের শক্ত অবস্থান ছিল এ আসনে। তাদের প্রকাশ্য ও নীরব গ্রুপিংয়ের খেসারত আগামী জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

এতকিছুর পরেও এখানে যাদের নাম শোনা যায় তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান এমপি মহিবুর রহমান মহিব, উপজেলা আ. লীগের সভাপতি সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, এনএসআইর সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাবিবুর রহমান মিলন, উপজেলা চেবয়ারম্যান ও উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাকিবুল আহসান, ওয়াশিংটন আ. লীগের উপদেষ্টা মো. আলাউদ্দিন আহমেদ, সাবেক এমপি মরহুম আনোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসলাম লিটন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম আল সাইফুর সোহাগ ও যুবলীগের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি মোরছালিন। বিএনপি থেকে যাদের নাম শোনা যায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির।

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *