বরিশাল অফিস :: ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভিমরুলীর ভাসমান লেবুর হাট চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে। প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ লেবু কেনাবেচা হচ্ছে। পাইকাররা নৌকা থেকে লেবু কেনে গাড়িতে করে বরিশাল আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন। অনেকে আবার মালবাহী ট্রলার বা ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর ঝালকাঠি জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৯২ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ করা হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে লেবুর ফলন প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর কম হলেও কৃষকরা ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি। দেশীয় সুগন্ধিযুক্ত কাগজিলেবু ছোট হলেও ভেতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই লেবুর প্রতি সবারই কম-বেশি আকর্ষণ আছে। লেবুচাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গাছের পরিচর্যাসহ সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ৩ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার ২২টি গ্রামের ৯২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুগন্ধি কাগজিলেবুর। ভিটামিন-সি যুক্ত রসাল এই লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা আশপাশের এলাকা। বাজারে বিভিন্ন জাতের লেবু ১২ মাস পাওয়া গেলেও মৌসুমি এ কাগজিলেবুর চাহিদাই বেশি। সদর উপজেলার কৃষি অঞ্চলখ্যাত কীর্তিপাশা, নবগ্রাম ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামেই কাগজিলেবুর উৎপাদন হয়। গ্রামীণ হাট-বাজারে বিক্রি হলেও মূল মোকাম ভিমরুলী।
ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত রসাল সুগন্ধি কাগজিলেবু সবার কাছেই প্রিয়। ঝালকাঠির বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষণ্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২টি গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা। প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসেন। অপেক্ষমাণ পাইকাররা ট্রলারে বসেই লেবু কেনে নেন।
সরেজমিন আলাপ হয় স্থানীয় লেবুচাষিদের সঙ্গে। এ সময় তারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। গত বছর ১ পোন (৮০টি) লেবু ছিল আড়াইশ টাকা। এবার তা ৪শ টাকা। গ্রামের কৃষকরা সজ্জন পদ্ধতিতে (কাঁদি কেটে) লেবু চাষ করছেন। একেকটি কাঁদি ১শ থেকে ১১০ হাত লম্বা এবং ৭-৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২ থেকে ২৫টি গাছ লাগানো যায়। এ রকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পরে প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যায়। সে হিসাবে লেবু বিক্রি করে প্রতি বছর কৃষকরা আয় করছেন দেড় থেকে ৩ কোটি টাকা।
লেবুর পাইকারি ব্যবসায়ী রহমান জানান, পটুয়াখালী থেকে মালবাহী ট্রলার এলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। ওখানের কাঁচামাল বিক্রেতাদের সঙ্গে আগেই চুক্তি করা থাকে। কেনা দামের ওপর লাভ রেখে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় পাইকাররা জানান, তীব্র গরমের কারণে ঘেমে মানুষের শরীর দুর্বল হয়। জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হলে লেবুর শরবত পান করলে আরোগ্য লাভ করা যায়। তাই কাগজিলেবুর চাহিদা বরাবরই বেশি। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার চাহিদা অনেকগুণ বেশি। এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্য দিয়েই লেবু কেনে নেওয়া হচ্ছে। ভালো মানের একেকটি লেবুর ক্রয় মূল্যই হচ্ছে ৫ টাকা যা খুচরা বাজারে ৭-৮ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। প্রতি বছরই লেবুর চাহিদা থাকে। কিন্তু এ বছর চাহিদা অনেক বেশি।
কথা হয় লেবুচাষি বশিরের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ঝালকাঠির কাগজিলেবুর কদর সবার কাছেই সমান। ফলন ধরার পর দুভাবে লেবু বিক্রি করে থাকি। প্রথমত স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে পাইকারদের কাছে। এ ছাড়া গাছে ফল আসার পর পাইকারদের কাছে বাগান বিক্রি করি এককালীন নগদ টাকায়। ভিমরুলী থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে পাইকাররা কেনে তা সরবরাহ করেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।